পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9९ বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । সেই প্রেমে কাতর, যৌবনে কোমল বাহুগুটি বিহারীর জানু চাপিয়া রহিল। বিহারী মনে মনে কহিল, “এমন সুন্দর প্রেমের সংসার ছারখার করিয়া দিলি !” কিন্তু বিনোদিনীর সেই উৰ্দ্ধোৎক্ষিপ্ত ব্যাকুল মুখের চুম্বন-নিবেদন তাহাকে নীরবে কহিতে লাগিল, “আমি তোমাকে ভালবাসি । সমস্ত জগতের মধ্যে আমি তোমাকে বরণ করিয়াছি ।” ছ-u-কিস্ত এই কি জবাব হইল ? এই কথাই যাইতাম, হাস্তমুখোরের নিদারুণ আৰ্ত্তস্বরকে পাশ্বে দাড়াইয়া উদ্বপিশাচি ! পাইতাম, তাহ এতণর এটা কি পুরা ভৎদুরাশার সামগ্রী, তন, ইহার সঙ্গে একটুকি ক্ষতি এবং পাই আসিয়াও মিশিল ? যে লাভ ! তবু কেতাহীর সমস্ত জীবনের সমস্ত বিপুল ভূমংখা হইতে বঞ্চিত হইয়া একেবারে -শূনঃশ্ব ‘াভখারীর মত পথে আসিয়া দাড়tইয়াছে, সেই মুহূৰ্ত্তে বিহারী কি এমন অষাচিত অজস্র প্রেমের উপহার সমস্ত হৃদয়ের ১সহিত উপেক্ষা করিয়া ফেলিয়া দিতে পারে ? ইহার তুলনায় বিহারী কি পাইয়াছে ? এতদিন পর্য্যন্ত সমস্ত জীবন উৎসর্গ করিয়া সে কেবল প্রেমভাণ্ডারের খুদকুঁড়া ভিক্ষা করিতেছিল। প্রেমের অন্নপূর্ণ সোণার থালা ‘ভরিয়া আজ এক তাহারই জন্য যে ভোজ পাঠাইয়াছেন, হতভাগ্য কিসের দ্বিধায় তাহা হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিবে ? ছবি কোলে লইয়। এইরকম নানা কথা যখন সে একমনে আলোচনা করিতেছিল, এমন সময় পাশ্বে শব্দ গুনিয়া চমকিয়৷ উঠিয়া দেখিল, মহেন্দ্র আসিয়াছে। চকিত হইয় দাড়াইয়া উঠিতেই কোল হইতে ছবিখানি নীচে কাপেটের উপর পড়িয়া গেল-বিহারী তাহা লক্ষ্য করিল না । মহেন্দ্র একেবারেই বলিয়া উঠিল, “বিনোদিনী কোথায় ?” বিহারী মহেদের কাছে অগ্রসর হইয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “মহিন্দী, একটু বোস ভাই, সকল কথার আলোচনা করা যাইতেছে ।” মহেন্দ্র কহিল, “আমার বসিবার এবং আলোচনা করিবার সময় নাই। বল, বিনোদিনী কোথায় ?” বিহারী কহিল—“তুমি যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাস। করিতেছ, এক কথায় তাহার উত্তর দেওয়া চলে না। একটু তোমাকে স্থির হইয় বসিতে হইবে।” মহেন্দ্ৰ কহিল—“উপদেশ দিবে ? সে সব উপদেশের কথা আমি শিশুকালেষ্ট পড়িয়াছি। ” বিহারা। না, উপদেশ দিবার অধিকার ও ক্ষমতা আমার নাই । মহেন্দ্র । ভৎসনা করিবে ? আমি জানি আমি পাষণ্ড, আমি নরাধম, এবং তুমি যাহা বলিতে চাও, তাহ সবই । কিন্তু কথা এই, তুমি জান কি না, বিনোদিনী কোথায় ? বিহারী। জানি । মহেন্দ্র । আমাকে বলিবে কি না ? বিহারী। না। ’ মহেন্দ্র। . বলিতেই হইবে ! তুমি তাহাকে চুরি করিয়া আনিয়া লুকাইয়া রাখিয়াছ। সে আমার, তাছাকে ফিরাইয়া দাও !