পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] বৃহৎ তালিকু অনায়াসে সংগৃহীত হইতে পরিবে"। পৃথিবীতে জিনিষমাত্রই প্রকাশধৰ্ম্মী নয়। কয়লা আগুন না পাইলে জলে না, স্ফটিক অকারণে ঝকৃঝক্ করে। কয়লায় বিস্তর কল চলে, স্ফটিক হার গাথিয়া প্রিয়জনের গলায় পরাইবার জন্ত । কয়লা আবশুক, স্ফটিক মূল্যবান । এক একটি দুলভ মানুষ এইরূপ স্ফটিকের মত অকারণ ঝলমল করিতে পারে। সে সহজেই আপনাকে প্রকাশ করিয়া থাকে-তাহার কোন বিশেষ উপলক্ষ্যের আবশ্যক হয় না । তাহার নিকট হইতে কোন বিশেষ প্রয়োজন সিদ্ধ করিয়া লইবার গরজ কণহারে থাকে না- সে অনায়াসে আপনাকে আপনি দেদীপ্যমান করে, ইহা দেখিয়াই আনন্দ । মানুষ, প্রকাশ এত ভালবাসে, আলোক তাহার এত প্রিয় যে, আবশ্লাককে বিসর্জন দিয়া, পেটের অন্ন ফেলিয়াও উজ্জ্বলতার জন্ত লীলায়িত হইয়৷ উঠে। এই গুণটি দেখিলে, মানুষ যে পতঙ্গশ্রেষ্ঠ, সে সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না । উজ্জল চক্ষু দেখিয়া যে জাতি অকারণে প্রাণ দিতে পারে, তাহার পরিচয় বিস্তারিত করিয়া দেওয়া বাহুল্য। কিন্তু সকলেই পতঙ্গের ডান লইয়া জন্মায় নাই। জ্যোতির মোহ সকলের নাই। অনেকেই বুদ্ধিমান, বিবেচক। গুহ দেখিলে তাহারা গভীরতার মধ্যে তলাইতে চেষ্টা করেন, কিন্তু আলো দেখিলে উপরে উড়িবার ব্যর্থ উদ্যমমাত্রও করেননি । কাব্য দেখিলে ইহার প্রশ্ন করেন ইহার মধ্যে ২৭৩ লাভ করিবার বিষয় কি আছে, গল্প শুনিলে অষ্টাদশ সংহিতার সহিত মিলাইয়া ইহারা ভূয়সী গবেষণার সহিত বিশুদ্ধ হিন্দুমতে দুয়ো বা বাহবা দিবার জন্ত প্রস্তুত হইয়া বসেন। যাহা অকারণ, যাহা অনাবশুক, তাহার প্রতি ইহাদের কোন লোভ নাই । যাহারা আলোক-উপাসক, তাহার এই সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করে নাই। তাহারা ইহাদিগকে যে সকল নামে অভিহিত করিয়াছে, আমরা তাহার অমুমোদন করি না। বররুচি ইহাদিগকে অরসিক বলিয়াছেন, আমাদের মতে ইহা রুচিগহিত । আমরা ইহাদিগকে যাহা মনে করি, তাহা মনেই রাখিয়া দিই। কিন্তু প্রাচীনের মুখ সাম্‌লাইয়া কথা কহিতেন না—তাহার পরি চয় একটি সংস্কৃতশ্লোকে পাই । ইহাতে বলা হইতেছে, সিংহনখরের দ্বারা উৎপাটিত একটি গজমুক্ত বনের মধ্যে পড়িয়াছিল, কোন ভৗলরমণী দূর হইতে দেখিয়া ছুটিয়া গিয়া তাহা তুলিয়া লইল—যখন টিপিয়া দেখিল তাহ পাকা কুল নহে, তাহা মুক্তামাত্র, তখন দূরে ছুড়িয়া ফেলিল। স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে, প্রয়োজনীয়তা-বিবেচনায় যাহারা সকল জিনিষের মূল্যনিদ্ধারণ করেন, শুদ্ধমাত্র সৌন্দর্য্য ও উজ্জলতার বিকাশ যাহtদিগকে লেশমাত্র বিচলিত করিতে পারে না, কবি বৰ্ব্বরনারীর সহিত তাহাদের তুলনা দিতেছেন। আমাদের বিবেচনায় কবি ইহাদের সম্বন্ধে নীরব থাকিলেই ভাল করিতেন— কারণ, ইহার ক্ষমতাশালী লোক, বিশেষত, সমালোচনার ভার প্রায় ইহাদেরই হাতে । ইহার গুরুমহাশয়ের কাজ করেন। র্যাহার