পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] হইতে জগতের সমস্ত বাহির হইয়া আসিতেছে, সমস্ত শক্তি ছুটিয়া আসিতেছে । ক্ষুদ্রতম প্রাণীর জীবনলীলাও সেই ব্রহ্মের মধ্যে সম্পাদিত হইতেছে । আনন্দের কণামাত্র ষেথায়, ব্ৰহ্ম সেথায় বিরাজমান । নিয়তই দূরে এক পূর্ণমুখের ধ্রুবতারাকে চক্ষে রাখিয়া, মুখ, চক্র হইতে পরিবৃদ্ধিত চক্রে আরোহণ করিয়া চলিয়াছে। ধরণীর কেন্দ্রগহবরে বহুি জলিতেছে, ধরণীর মুখ মনুষ্যমুখের মত রং ফিরাইতেছে, গলিত তপ্তধাতু পাথর বিদীর্ণ করিয়া খনির মধ্যে শাখাল্পিত হইয়া রং গাঢ় করিতে করিতে চলিয়া যায়, শুষ্ক নদীর তলায় পিঠ জাগাইয়া অবশেষে সুর্য্যালোকে কোথায় বাহির হইয়। চূৰ্ণবালুবৎ ঝরিয়া পড়ে,–ব্রহ্ম সেই আনন্দে মগ্ন। সমুদ্রতরঙ্গ সফেন শুভ্ৰ হইয় উঠে,— দগ্ধ, নির্জন প্রান্তরে অদ্ভুত আগ্নেয়গিরিদল ভূতের মত উঠিয় আসে-অগ্নিনেত্রে পরস্পরের দিকে চাহিয়া থাকে—ব্রহ্ম সেই আননে মূয়। তার পরে ধরণী শতে স্তম্ভিত—হঠাৎ বসন্ত কোথা হইতে নাচিতে নাচিতে আসিয়া ধরায় সঞ্জীবনী মুধা ছড়াইয়া দেয়, বন্ধুর-গিরিতটে গুস্ক শিকড়জাল ও তুষারম্ফোটের ভিতর হইতে এখানে-সেখানে এক-আধট নবাছুরের শুামশোভা উদগত হইতে থাকে,—মনে হয়, একটি হাসির রেখা যেন অতিকষ্টে একটা বলীকুঞ্চিত মুখের উপর আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করিতেছে —এদিকে আবার পতঙ্গ-প্রজাপতি সুৰ্য্যালোকে উড়িয়া বেড়ায়, পিপীলিকা সার বাধিয়া কাজে যায়, ৰিহগদল আনন্দগানে বিভোর হইয়া উৰ্দ্ধে হইতে প্যারাসেলসাস । v56)ყ উদ্ধে ছুটিতে থাকে, দুরে মহাসাগর ঘুমাইয় পড়ে, অরণ্যে-প্রাস্তরে ভীষণ আরণ্যজন্তুরাও তাছাদের প্রতিভাজনকে খুজিয়া বেড়ায়,–ব্রহ্ম সেই আনন্দে মগ্ন । জড়জগতে আনন্দবোধের কণ কণা ছড়ান রহিয়াছে, মামুষে আসিয়া সব কেন্দ্রীভূত হইল। এই পৰ্য্যস্ত জীবনের এক অধ্যায় সমাপ্ত। মানুষের কেন্দ্র হইতে আলোক বাহির হইয়া পশ্চাতের জগৎটকে আলোকিত করিয়। রাখিয়াছে । মানুষ পশ্চাতে ফিরিয়া আপনার ইতিহাস খুজিয়া দেখে, ক্রমে সকল পদার্থে আপনার ভাব মাথাইয়া দিতে থাকে ;–পবনপ্রচারে শব্দ উঠে, কখনো হাস্ত, কথন জড়িতকলহ। দেবদারুদল জলন্ত নরকদ্বারের দ্যায় অস্তস্বর্য্যকে কাওপংক্তি দ্বারা আড়াল করিয়া দাড়াইয়। সন্ধ্যায় কোন গভীর কথার আলাপ করে— অরণ্যের বৃক্ষাগ্রে কোন বনদেবতার বাক৷ চক্ষু উকি মারিয়া চাহিতে থাকে। প্রভাতকাল উল্লাস-উদ্যমে ভরিয়া উঠে, সন্ধ্যার সঙ্গে গভীর বিরাম আবিভূত হয়, অস্তকালের সিন্মুরচ্ছটা হইতে বিজয়গান ধ্বনিত হইয়া উঠে, কাহার সহান্ত মুখের স্তায় পূর্ণচন্দ্রের আলোকে বিলাসরসে শস্ত আপনাকে পাকাইতে থাকে । ক্রমে মানুষ, আরও সম্মুখে, আরও সম্মুখে চলিয়া যাউকৃ—সমস্ত জাতির জাগরণ নহিলে চলিবে না। এই যে সমাজদেহ নিদ্রিত রহিয়াছে –একটি-দুটি অঙ্গ স্পন্দিত হইতেছে বটে, কিন্তু তাহাতে হইবে কি ?— সমস্ত দেহটিকে জাগিতে হইবে । আধর ফুরিত হইয়া আধ-আধ কি-কথা অনেক