পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] শিক্ষণসমস্ত । 8 সঙ্গে এই বিচারটাও উপেক্ষার বিষয় নহে। কি শিখাইব, তাহা ভাবিবার বটে—কিন্তু যাহাকে শিখাইব, তাহার সমস্ত মনটা কি করিয়া পাওয়া যাইতে পারে, সেও কম কথা নয়। . একদিন তপোবনে ভারতবর্ষের গুরুগৃহ ছিল, এইৰূপ একটা পুরাণ-কথা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে । অবশ্য তপোবনের যে একটা পরিষ্কার ছবি আমাদের মনে আছে, তাহা নহে এবং তাহ অনেক অলৌকিকতার কুহেলিকায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছে। যেকালে এই সকল আশ্রম সত্য ছিল, সেকালে তাহারা ঠিক কিরূপ ছিল, তাহা লইয়া তর্ক করিব না, করিতে পারিব না। কিন্তু ইহা নিশ্চয় যে, এই সকল আশ্রমে যাহারা বাস করিতেন, তাহারা গৃহী ছিলেন এবং শিষ্যগণ সস্তানের মত তাহাদের সেবা করিয়া তাহীদের নিকট হইতে বিদ্যাগ্ৰহণ করিতেন । এই ভাবটাই আমাদের দেশের টোলেও আজ কতকটা-পরিমাণে চলিয়া আসিয়াছে। এই টোলের প্রতি লক্ষ্য করিলেও দেখা যাইবে, চতুষ্পাঠীতে কেবলমাত্র পুথির পড়াটাই সব চেয়ে বড় জিনিষ নয়, সেখানে চারিদিকেই অধ্যয়ন-অধ্যাপনার হাওয়া বহিতেছে। গুরু নিজেও ঐ পড়া লইয়াই আছেন ; শুধু তাই নয়, সেখানে জীবনযাত্রা নিতান্ত সাদাসিধা ; বৈষয়িকতা, বিলাসিত মনকে টানাছেড়া করিতে পারে না, সুতরাং শিক্ষাট, একেবারে স্বভাবের সঙ্গে মিশ খাইবার সময় ও সুবিধা পায়। যুরোপের বড়-বড় শিক্ষাগারেও যে এই ভাবটি নাই, সে কথা বলা আমার উদ্দেগু নহে । n প্রাচীন ভারতবর্ষের মতে, যতদিন অধ্যয়নের কাল, ততদিন ব্রহ্মচৰ্য্যপালন এবং গুরুগৃহে বাস আবর্তক। - _. 龟 ব্ৰহ্মচৰ্য্যপালন বলিতে যে কৃচ্ছসাধন বুঝায়, তাহী নহে। সংসারের মাঝখানে যাহারা থাকে, তাহারা ঠিক স্বভাবের পথে চলিতে পারে না। নানা লোকের সংঘাতে নানা দিকৃ হইতে নানা ঢেউ আসিয়া অনেকসময়ে অনাবশ্যকরূপে তাহাদিগকে চঞ্চল করিতে থাকে—যে সময়ে যে সকল হৃদয়বৃত্তি জণ-অবস্থায় থাকিবার কথা, তাহারা কৃত্রিম আঘাতে অকালে জন্মগ্রহণ করে ; ইহাতে কেবলি শক্তির অপব্যয় হয় এবং মন কুৰ্ব্বল ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া পড়ে। ● অথচ জীবনের আরম্ভকালে বিকৃতির সমস্ত কৃত্রিম কারণ হইতে স্বভাবকে প্রকৃতিস্থ রাখা নিতা স্তুই আবশুক। প্রবৃত্তির অকালবোধন এবং বিলাসিতীর উগ্র উত্তেজনা হইতে মনুষ্যত্বের নবোদগমের অবস্থাকে স্নিগ্ধ করিয়া রক্ষা করাই ব্রহ্মচৰ্য্যপালনের উদেষ্ঠ । বন্ধত এই স্বভাবের নিয়মের মধ্যে থাকা' বালকদের পক্ষে সুখের অবস্থা। ইহাতে তাহাদের পূর্ণবিকাশের সহায়তা করে, ইহাতেই তাহারা যথার্থভাবে স্বাধীনতার আনন্দলাভ করিতে পায় । ইহাতে তাহাদের নবাস্কুরিত নিৰ্ম্মল সতেজ মন, সমস্ত শরীরের মধ্যে দীপ্তির সঞ্চার করে। ব্ৰহ্মচৰ্য্যপালনের পরুিবৰ্ত্তে আজকাল নীতিপীঠের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। যে-কোনো উপলক্ষ্যে ছাত্রদিগকে নীতি-উপদেশ দিতে হইবে, দেশের অভিভাবকদের এইরূপ অভিপ্রায় ।