পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] সময় কাটাইবার জন্ত ঘুরিয়া-মুরিয়া ঐ সমুদয় দেখিয়া বেড়াইলাম। ১২টার পর রাজপরিচ্ছদ পরিয়া মহারাজ দরবারে উপস্থিত হইলেন। স্বাক্ষরকার্য্য শেষ হইলেই আমি আহূত হইলাম। মহারাজ বিনয়ী ও বিলক্ষণ শিষ্টাচারপরায়ণ । প্রায় ১৫মিনিট কথোপকথন হইল । প্রথমে সংস্কৃতে, শেষে হিন্দীতে আলাপ শেষ হইল। তাহার পর আমি আদেশ লইয় বাসায় ফিরিলাম। দেওয়ান, প্রাইভেট সেক্রেটরি ও দারোগ আমাকে রাজবাটতে আহার করিবার জন্ত বিশেষ নিৰ্ব্বন্ধ প্রকাশ করিলেন, কিন্তু অকারণ তীর্থক্ষেত্রে প্রতিগ্রহ করা আমি সঙ্গত মনে করিলাম না, তাহাদিগকে ধন্যবাদ করিয়া ১টার সময় বাসায় ফিরিলাম । ● বর্তমান অযোধ্যায় শতাধিক মন্দির বিদ্যমান। উহার কতক বিষ্ণুমন্দির, কতক শিবমন্দির, কতক জৈনমন্দির। অবশিষ্ট মুসলমানের মসজিদ। এই নগরী উদাসীন ও ব্রাহ্মণে পরিপূর্ণ। উদাসীনগণের মধ্যে নিৰ্ব্বাণী, নিৰ্ম্মোহী, দিগম্বরী, খাকী, মহানিৰ্ব্বাণী, সন্তোষী, নিরালম্বী প্রভৃতি বহু বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের মঠ আছে। কাশ্মীর, জয়পুর, উদয়পুর, অযোধ্যা প্রভৃতি স্থানের মহারাজদিগের প্রদত্ত অর্থে ঐ সকল মঠ ও অতিথিশালার ব্যয়নিৰ্ব্বাহ হইয়া থাকে। কনোজিয়া, সরযূপারী ও শাকদ্বীপী ব্রাহ্মণই এই নগরীর প্রধান অধিবাসী। কিন্তু এই তিন সম্প্রদায়ইনিতান্ত দরিদ্র। কলেজিয়াদের অধিকাংশই কৃষিজীবী,দরোয়ান, অযোধ্যা । HIV পাণ্ডাদের চাকর ও মেঠাইওয়ালা। সরযূপারী ও শাকদ্বীপীরা জ্যোতিষী, চিকিৎসক, পুরোহিত, আর ভিক্ষাজীবী। ইতিপূৰ্ব্বে এখানে বিদ্যাচর্চ অধিক ছিল না। বর্তমান মহারাজের যত্নে কয়েকটি সংস্কৃতপাঠশালা ও একটি ইংরাজীফুল স্থাপিত হইয়াছে। ঐ সকল বিদ্যালয়ে নগরবাসী বালকের কিছু কিছু বিদ্যাশিক্ষা করিতেছে । ঐ দিন অপরাহে ৫টার সময় স্বৰ্গদ্বারঘাটে বসিয়া সরযুর তরঙ্গমালা নিরীক্ষণ করিতেছিলাম, এমনসময় এক ভৈরবী সেখানে উপস্থিত হইলেন। পরিচয়ে জানিলাম, ইনি বাঙালী ব্রাহ্মণকন্ত, বৈধব্যদশায় নিপতিত হইয়া কাশীতে গমন করেন এবং কিছুকাল কাশীতে অবস্থানের পর তন্ত্রমতে দীক্ষিত হইয়া ভৈরবী হন। এথন প্রায় প্রৌঢ়বয়সে উপনীত হইয়াছেন। এই বাঙালীমহিলার সাহস নিতান্ত অল্প, নহে। ইনি কাশ্মীরের অমরনাথ, দ্বারকার রুশছোড়মূৰ্ত্তি, কামরূপের কামাখ্যাদেবী, ভূতপুরীর শ্রীরঙ্গমূৰ্ত্তি প্রভৃতি একাকিনী ভ্রমণ করিয়া দর্শন করিয়াছেন । ভৈরবী বলিলেন, “তিনি দুইতিন সপ্তাহের অধিক কোথাও থাকেন না, কিন্তু অযোধ্যায় মাসাধিক° কাল আছেন। দুইদিন গত হইল, বানরে তাহার দেহ ক্ষত বিক্ষত করিয়া দিয়াছে।” তাহার দুর্দশ দেখিয়া আমারও মুনে ভয়ের সঞ্চার হইল। আমি পরদিন অপরাহ্লে অযোধ্যা ত্যাগ করিলাম । *...* • * ঐশরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী ।