পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবাহের অনুকরণ । সে বিবাহে রেজেক্টরী আছে, সাক্ষী আছে, অঙ্গীকার আছে আর এক প্রকার উপাসনা আছে। আমাদ্বিগের সামাজিক বিবাহে নারায়ণকে ও অগ্নিদেবকে সাক্ষী করিয়া মন্ত্র পাঠ করা হইয়া থাকে; ব্ৰাহ্মদিগের ব্ৰাহ্ম বিবাহে মানুষের সাক্ষী হয়। শাস্ত্র তাঁরা মান্ত করেন না, সুতরাং শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করাই বিফল। ঐ প্রকার ব্রাহ্ম বিবাহে যে সকল সন্তান উৎপন্ন হয়, তাহারা পিতৃধনের উত্তরাধিকারী হইতে পরিবে কি না, প্ৰথমে এই কথা লইয়া তৰ্ক উঠিয়াছিল, ঘোরতর বিরোধ উপস্থিত হইয়াছিল, বিরোধভঞ্জনের নিমিত্ত, বিবাহটী পাকাপাকি করিবার নিমিত্ত ব্ৰাহ্ম ভ্রাতারা ইংরাজ বাহাদুরের সরকারে স্বতন্ত্র আইন প্রার্থনা করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। যেখানে এ প্রকার গুরুতর ব্যাপার, সেখানে ঐ প্রকার ব্রাহ্ম বিবাহকে বাঙ্গালীর সামাজিক বিবাহ মধ্যে গণনা করা ধাইতে পারে না। সাধারণ বাঙ্গালী সমাজে অধুনা যে প্রকার বিবাহ চলিতেছে, তাহা প্রাজাপত্য বিবাহের রূপান্তর অথবা নামান্তর হইলেও সেই বিবাহের উল্লেখ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। " নাহাদিগকে লইয়া সমাজ, তাহাদিগকে সম্মুখে দাড় করাইয়াই সমাজের কথা বলতে হয়। রাজা বল্লাল সেন ব্ৰাহ্মণ, কায়স্থ জাতির মধ্যে কুলীন অকুলীন শ্ৰেণীবিভাগ করিয়া দিয়াছেন। কুলীনের বিবাহ এবং অকুলীনের বিবাহ ভিন ভিন্ন প্রকার। এ দেশে ইংরাজী শিক্ষার প্রবলতা যখন ছিল না, তখন কুলীনের বংশানুগত কুলমৰ্য্যাদা ঠিক ছিল ; ইংরাজীশিক্ষা প্রবেশ করাতে সে মৰ্যাদা ক্ৰমে ক্ৰমে ক্ষীণ হইয়া আইসে, ভিতরে প্রবেশ না করিয়া অনেকেই কৌলীন্যপ্রগার নিন্দা করিতেন, আজও করেন। দিনকাল যেরূপ পড়িয়াছে, তাহাঁতে বড় বড় বনিয়াদী বংশ ব্যতীত অনেকেই বংশপরম্পরানুগত কৌলীন্য মৰ্য্যাদায় অবহেলা করিতেছেলু। পূর্মে পূৰ্ব্বে কুলীনের কন্যা অকুলীনে প্রদত্ত হইত না, এখন সে প্রথা অনেক স্থালৈ স্বীকৃত হইতেছে না। কুলীনকে কন্যাদান করিতে হইলে মৰ্য্যাদানুসারে কস্তার পিতাকে পূর্বে পূর্বে সম্রাম্যমত বরের পণ ও কুলীন বরযাত্ৰগণের গণ ইত্যাদি কুলমৰ্য্যাদার ব্যয় বহন করিতে হইত ; তাহা কাহারও পক্ষে কষ্টকর ইষ্টত না, শক্তিসামৰ্থ্য বিবেচনায় উভয়পক্ষের মৰ্য্যাদারীক্ষণ হইত, অথচ কাহকেও দায় গ্ৰস্ত হইতে হইত না। আজকাল সেই সুপ্ৰথা প্রায় সম্পূর্ণরূপে উণ্টইয়া যাইতেছে । অন্বেষণ করিয়া দুটা একটি দৃষ্টান্ত বাহির করিতে হয় না,