পাতা:বঙ্গসাহিত্যে নারী.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গসাহিত্যে নারী

অন্যান্য অনেক জনহিতকর অনুষ্ঠানের ন্যায়, অগ্রণী হিসাবে ইহার গৌরবও মিশনরীদেরই প্রাপ্য। তাঁহাদেরই নিরলস চেষ্টায় অচিরাৎ কলিকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি বালিকাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়া ব্যাপকভাবে স্ত্রীশিক্ষা প্রচারের সূত্রপাত হয়। এই ব্যাপারে তাঁহারা কয়েকজন দেশীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির—যথা, সভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব, কলিকাতা স্কুল-বক ও স্কুল সোসাইটির পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার, জোড়াসাঁকো-রাজপরিবারের রাজা বৈদ্যনাথ রায় প্রভৃতির সাহায্য ও সহানুভূতি লাভ করিয়াছিলেন। গৌরমোহন স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে ১৮২২ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসে ‘স্ত্রীশিক্ষাবিধায়ক—অর্থাৎ পুরাতন ও ইদানীন্তন ও বিদেশীয় স্ত্রীলোকের শিক্ষার দষ্টান্ত’ নামে একখানি পুস্তক রচনা করিয়া দিয়াছিলেন। দুই বৎসর পরে প্রকাশিত এই পুস্তকের তৃতীয় সংস্করণে সংযোজিত ‘দুই স্ত্রীলোকের কথোপকথনে’র নিম্নোদ্ধৃত অংশ হইতে সে সময় সাধারণ গৃহস্থঘরের মেয়েরা বিদ্যাচর্চায় কত দর অনগ্রসর ছিলেন তাহার একটি চিত্র পাওয়া যাইবে:

 “প্র। ওলো। এখন যে অনেক মেয়্যা মানষ লেখাপড়া করিতে আরম্ভ করিল। এ কেমন ধারা। কালে২ কতই হবে ইহা তোমার মনে কেমন লাগে।

 উ। তবে মন দিয়া শুন দিদি। সাহেবেরা এই যে ব্যাপার আরম্ভ করিয়াছেন, ইহাতেই বুঝি এত কালের পর আমারদের কপাল ফিরিয়াছে, এমন জ্ঞান হয়।

 প্র। কেন গো। সে সকল পুরুষের কায। তাহাতে আমাদের ভাল মন্দ কি।

 উ। শুন লো। ইহাতে আমারদের ভাগ্য বড় ভাল বোধ হইতেছে; কেননা এদেশের স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া করে না, ইহাতেই তাহারা প্রায় পশুর মত অজ্ঞান থাকে। কেবল ঘর বারের কায কর্ম্ম করিয়া কাল কাটায়।

 প্র। ভাল। লেখাপড়া শিখিলে কি ঘরের কায কর্ম্ম করিতে হয় না। স্ত্রী লোকের ঘর বারের কায রাঁধা বাড়া ছেলাপিলা প্রতিপালন না করিলে চলিবে কেন। তাহা কি পুরুষে করিবে।

 উ। না। পুরুষে করিবে কেন, স্ত্রীলোকেরই করিতে হয়, কিন্তু লেখাপড়াতে যদি কিছ জ্ঞান হয় তবে ঘরের কায কর্ম্ম সারিয়া অবকাশ মতে দই দণ্ড লেখা পড়া নিয়া থাকিলে মন স্থির থাকে, এবং আপনার গণ্ডাও বুঝিয়া পড়িয়া নিতে পারে।

 প্র। ভাল! একটা জিজ্ঞাসা করি। তোমার কথায় বুঝিলাম যে লেখাপড়া আবশ্যক বটে। কিন্তু সে কালের স্ত্রীলোকেরা কহেন, যে লেখাপড়া