পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বটকৃষ্ণ পাল እo ዒ পরিদর্শন করিয়া থাকেন। সম্প্রতি কার্যের সুবিধার জন্য তঁহাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হইয়াছে। বটকৃষ্ণ পাল মহাশয় শুধু অর্থার্জন করিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই, তিনি অর্থের সদব্যবহারেও সর্বদা অবহিত থাকিতেন। তিনি সরলপ্রকৃতি, সদাশয় ও পরোপকারী ছিলেন। ধন্যবান হইবার পরও তিনি কখনও তঁহার পূর্ব দারিদ্র্যের কথা বিস্মৃত হন। নাই-সেজন্য চিরদিনই দরিদ্রগণের জন্য তঁহার মায়ামমতা বিদ্যমান ছিল। তিনি ধনী হইয়া পরজীবনে কলিকতাবাসী হইয়াছিলেন, কিন্তু শিবপুরের পৈতৃক বাটীর কথা ভুলেন নাই। ধনী হইয়া তিনি সমারোহের সহিত শিবপুরের বাটীতে দুর্গোৎসব সম্পাদন করিতেন এবং কলিকাতা শোভাবাজারের বাটীতে জগদ্ধাত্রী ও সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হইত। দেবদ্বিজে তাহার অসাধারণ ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল। তিনি প্রতি একাদশীর দিন সমাগত বহু ব্ৰাহ্মণকে আট আনা করিয়া দক্ষিণা প্ৰদান করিতেন, মধ্যে মধ্যে বহু ব্ৰাহ্মাণ ভোজনেরও আয়োজন করিতেন। হিন্দুদিগকে বহু ব্যয়ে পঞ্জিকা ক্ৰয় করিতে হয় দেখিয়া তাহার পরদুঃখকাতর হৃদয় ব্যথিত হইয়াছিল ; সেজন্য তিনি একখানি পঞ্জিকা প্ৰকাশ করিয়া তাহা ব্রাহ্মণ সজ্জনগণকে বিতরণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। এখনও তঁহার উপযুক্ত পুত্ৰগণ পঞ্জিকা প্ৰকাশ ও বিতরণ” করিয়া থাকেন। ১৩২০ সালে তিনি কলিকাতার অদূরে কামারপাড়া গ্রামে এক সাধকের আশ্রম-ভূমির উপর একটি মন্দির নির্মাণ করাইয়া তথায় গন্ধেশ্বরী প্ৰতিমা প্ৰতিষ্ঠাষ্ট করিয়াছিলেন। শিক্ষাবিস্তারেও তাঁহার আগ্রহ কম ছিল না। তঁহার চেষ্টায় কলিকাতার নানাস্থানে কয়েকটি এবং শিবপুরে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। তিনি সেকালের লোক হইয়াও স্ত্রীশিক্ষার বিশেষ পক্ষপাতী ছিলেন; সেজন্য শোভাবাজার পল্লিতে তাহার দ্বারা কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠিত’ হইয়াছিল। তিনি তঁহার পল্লি ধামে একটি অন্নসত্র ও একটি টোল** এবং কলিকাতায় আর একটি টোল প্রতিষ্ঠা ২ করিয়াছিলেন। গত ১৩২১ সালের ২৯ জ্যৈষ্ঠ তিনি পরলোকগত হইয়াছেন। তাহার তৃতীয় পুত্ৰ হরিশঙ্কর গভর্নমেণ্ট কর্তৃক “স্যার” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছেন এবং কলিকাতার মেয়র পদ এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স নামক দেশীয় বণিকগণের সর্বপ্রধান সমিতির সভাপতির পদ লাভ করিয়া দেশের ও দশের সেবায় ব্ৰতী আছেন।* বিটকৃষ্ণের পুত্ৰগণের দানে হুগলিতে “ভূতনাথ পাল কৃষি বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীগণের কৃষিশিক্ষার বিশেষ সুবিধা হইয়াছে। বটকৃষ্ণের মহানুভবতা বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন জাগরকে থাকিবে।

  • বর্তমানে সকলেই লোকান্তরিত হয়েছেন।