পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাজে আবদুল গনি ঢাকার বর্তমান নবাব-বংশের পূর্বপুরুষগণ কাশ্মীর হইতে দিল্লিতে আসিয়া অবস্থিত হন। এই বংশের খাজে আবদুল হাকিম দিল্লির রাজ-সংসারে কর্ম করিতেন। নাদির শাহ দিল্লি অধিকার করিলে খাজে আবদুল হাকিম সপরিবারে শ্ৰীহট্টে আসিয়া বাস স্থাপন করেন। এখানে তঁহার বিলক্ষণ সমৃদ্ধি হওয়ায় তিনি স্বীয় পিতা মৌলবি আবদুল কাদির এবং ভ্ৰাতৃদ্বয় মৌলবি আবদুল্লা ও মৌলবি আবদুল ওয়া সাহেবকে নিজের নিকট আনিয়া রাখেন। খাজে আবদুল হাকিম শ্ৰীহট্টে প্রচুর ভূসম্পত্তি অর্জন করেন। সেখানে এখনও তঁহার সমাধি বর্তমান আছে। তাহার মৃত্যুর পর ভ্রাতা মৌলবি আবদুল্লা তাহার বিষয়সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ভার প্রাপ্ত হইয়া সপরিবারে ঢাকায় বেগমবাজারে আসিয়া বাস। করেন। এযাবৎ এই বংশ ব্যবসায়-বাণিজ্য করিয়াই প্রধানত অর্থ উপার্জন করিতেছিলেন। অতঃপর মৌলবি হাফিজুল্লা। পরিবারের কর্তা হইয়া ভুসম্পত্তি ক্রয় করিতে আরম্ভ করিলেন। তঁহার এবং তঁহার উত্তরাধিকারিগণের চেষ্টায় শ্ৰীহট্ট, ঢাকা, বাখরগঞ্জ, ত্রিপুরা ও মৈমনসিংহ জেলায় প্রচুর ভূসম্পত্তি ক্রীত ও অর্জিত হইল এবং ঢাকার নবাব বংশ পূর্ববঙ্গের সর্বপ্রধান ভুস্বামীরূপে গণ্য হইলেন। মৌলবি হাফিজুল্লা যেমন জমিদারি বাড়াইতেছিলেন তদ্রািপ দানধ্যানে অর্থের সদব্যয়ও করিতেছিলেন। র্তাহার মৃত্যুর পর খাজে আলিমুল্লা এই একান্নাবতী পরিবারের সর্বপ্রধান কর্তা হইয়া নিজগুণে পূর্ববঙ্গে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি নিজ চেষ্টায় উচ্চ ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন ও সহিত অবাধে মিশিতেন, ময়দানে তঁহাদের সহিত খেলাধুলা করিতেন। তঁহার কয়েকটি সুশিক্ষিত হস্তী ও অশ্ব ছিল। ঢাকার ঘোড়দৌড়ের তিনি একজন উৎসাহদাতা ছিলেন এবং ঘোড়দৌড় বাজীতে প্রতি বৎসর একটি কাপ পুরস্কার দিতেন। এই প্ৰথা এখনও এই বংশে প্রচলিত আছে। খাজে আলিমুল্লার উত্তরাধিকারীই আমাদের নবাব খাজে আবদুল গনি।’ তিনি এই বংশকে গৌরবের উচ্চতম শিখরে স্থাপন করেন। জমিদারির ভারপ্রাপ্তির পূর্বে তিনি জমিদারিকার্য পরিচালন সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই শিক্ষালাভ করেন নাই। কিন্তু তীক্ষ্ণবুদ্ধি প্রভাবে, কাৰ্যভার পাইবার অনতিকাল মধ্যেই তিনি জমিদারি কার্য পরিচালন আয়ত্ত করিয়া লইয়া, একদিকে গভর্নমেন্ট এবং অপরদিকে তাহার প্রজাবর্গের সহিত সুমধুর প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপন করিলেন। এইরূপে তিনি পূর্ববঙ্গের আদর্শ জমিদার বলিয়া পরিগণিত