পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাজে আবদুল গনি Sò C9 হইলেন। ঢাকায় মুসলমান সমাজের উপর তঁহার এমনই প্রভাব জন্মিয়ছিল যে, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল বিরোধ উপস্থিত হইলে কেবল নবাব খাজে আবদুল গনির চেষ্টাতেই এই বিরোধের মীমাংসা হয়, নচেৎ মহা দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিবার সম্ভাবনা ছিল। বিবাদ প্রশমিত হইলে নবাব সাহেব নিজে ব্যয়ে উভয় সম্প্রদায়ের বিংশতি সহস্ৰ ব্যক্তিকে এক বিরাট ভোজ দেন। কেবল এই একটি ঘটনা নহে। নবাব সাহেবের প্রকৃতি এমন মধুর ও নিরপেক্ষ ছিল যে, দুই ব্যক্তি বা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হইলে, অনেক স্থলেই, উভয় পক্ষই নবাব সাহেবকে সালিশ মান্য করিয়া তাহার সিদ্ধান্ত শিরোধাৰ্য করিয়া সন্তুষ্টচিত্তে বিরোধের মীমাংসা করিয়া লইতে। এইরূপে তিনি অনেক পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সাম্প্রদায়িক কলহ নিবারণ করিয়া সমাজের মহা উপকার সাধন করিয়াছিলেন। সিপাহি বিদ্রোহের সময় নবাব খাজে আবদুল গনি যে দৃঢ়চিত্ততার ও ঈশ্বর-বিশ্বাসের পরিচয় দিয়াছিলেন তাহা অতুলনীয়। ঢাকা তখন একপ্রকার অরাজক৷৷ ৭৩ সংখ্যক নেটিভ ইনফ্যানট্রির কিয়দংশ তখন ঢাকায় অবস্থিত ছিল। সিপাহিরা নবাব সাহেবকে গভর্নমেন্টের পক্ষ ত্যাগ করিয়া তাহাদের সহিত যোগ দিবার জন্য অনুরোধ এমন কি ভয় প্রদর্শন পৰ্যন্ত করতে লাগিল। নবাব সাহেব তাহতে বিচলিত হইলেন না। তিনি নিৰ্ভীকভাবে উত্তর করিলেন, “তোমাদের ফতই ক্ষমতা থাকুক আমি তোমাদের ভয় করি না। আমি ঈশ্বরের উপর নির্ভর করিয়া আছি। তিনি সর্বশক্তিমান। এই দুঃসময়ে তিনি আমাকে ত্যাগ করবেন না, এ বিশ্বাস আমার আছে।” বিদ্রোহের সময়ের মধ্যেই তাহার বন্ধুবান্ধবগণ একবার তাহাকে পরামর্শ দিলেন যে, আপনি ঢাকা ত্যাগ করিয়া আপনার জমিদারির কোন সুদূর অংশে গিয়া অবস্থিতি করুন ; নচেৎ আপনাকে বিপন্ন হইতে হইবে। নবাব অকুতোভয়ে উত্তর করিলেন, এই সঙিন মুহুর্তে আমি ঢাকায় রহিয়াছি বলিয়াই লোকের আশা-ভরসা রহিয়াছে, ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের প্রতি তাহদের বিশ্বাস ও আস্থা রহিয়াছে। আমার উপস্থিতির জন্যই বিদ্রোহীরা তাহাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করিতে পারিতেছে না। আমি এখান হইতে চলিয়া গেলে লোকে আতঙ্কিত হইয়া উঠিবে। তখন তাহারা যে কি করিবে তাহ বলা যায় না। এই আতঙ্ক নিবারণই আমার সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্তব্য। আমি তাঁহাই করিতেছি এবং করিব। বিদ্রোহ যতদিন ছিল, নবাব সাহেব তঁহার ঢাকার আবাসবটী দুর্গের ন্যায় সুরক্ষিত করিয়া পরিবারবর্গও প্ৰজাবৰ্গকে অস্ত্রশস্ত্ৰে সুসজ্জিত করিয়া দিবারাত্ৰিপাহারার বন্দোবস্তকরিয়াছিলেন। ব্রিটিশ-শাসনের স্থায়িত্ব সম্বন্ধে তাহার অখণ্ড বিশ্বাস ছিল। তাই যখন গভর্নমেন্ট ঋণ গ্ৰহণ করিতে উদ্যত হইলেন, নবাব সাহেব প্রচুর কোম্পানির কাগজ ক্রিয় করিয়া সে সময়ে গভর্নমেন্টকে যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছিলেন। তদব্যতীত ঢাকার ইংরেজ কর্মচারীগণকে সে সময়ে তিনি নানাপ্রকারে সাহায্য করিয়াছিলেন। দেশের প্রকৃত অবস্থা যখন যেরাপ ঘটিতেছিল তাহা তিনি সরকারকে নিয়মিতভাবে জানাইতেছিলেন এবং তঁহার হাতী, অশ্ব, নৌকা, গাড়ি প্রভৃতি সরকারের ব্যবহারের জন্য ছাড়িয়া দিয়াছিলেন।