পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৩০
বঙ্গ-গৌরব

 সঙ্গীতের শেষ চরণে স্বদেশ-উন্মাদনা মূর্ত হইয়া দেখা দিয়াছে, তাই কবি গাহিতেছেন:—

যদিও মা তোর দিব্য আলোক ঘিরে আছে আজ আঁধার ঘোর;
কেটে যাবে মেঘ নবীন আলোক ভাতিবে আবার ললাটে তোর।
আমরা ঘুচাব মা তোর কালিমা মানুষ আমরা, নহি তো মেষ।
দেবী আমার, সাধনা আমার স্বর্গ আমার, আমার দেশ!”

 পঠদ্দশার পর হইতেই তিনি নানা পত্রিকায় লিখিতে আরম্ভ করেন। ভারতী, ১২ নব্যভারত, ১৩ প্রবাসী, ১৪ প্রভা ১৫ প্রমুখ তখনকার দিনের মাসিক পত্রাদিতে তিনি প্রায়ই প্রবন্ধ লিখিতেন। সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি নাটক, প্রহসন ইত্যাদিও লেখেন। সঙ্গীত রচনার ন্যায় নাটকেও তিনি সিদ্ধি লাভ করেন। সেগুলি তাঁহার স্বদেশপ্রাণতার অফুরন্ত উৎস। বিদ্যাসাগর মহাশয় একবার বলিয়াছিলেন যে, যে সব চরিত্রের তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন সে সব দেবচরিত্র। সুতরাং তাঁর লেখনী হইতে মনুষ্য চরিত্র সৃষ্টি হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইহাতে তিনি ‘নূরজাহান’১৬ ও ‘সাজাহান’১৭ রচনা করেন। ‘রাণা প্রতাপ’, ১৮ ‘দুর্গাদাস’,১৯ ‘মেবার পতনে ২০ এইরূপ দেবচরিত্রের সমাবেশ হইয়াছে। তাঁহার ‘তারাবাঈ', ২১ ‘কল্কি অবতার, ২২ 'আর্য্যগাথা', ২৩ ‘আষাঢ়ে’, ২, ২৪ 'হাসির গান'২৫ ‘ত্র্যহস্পর্শ’, ২৬ ‘বিরহ’,২৭ ‘পাষাণী’২৮ ইত্যাদি যথেষ্ট সমাদর লাভ করে। · ১৩০

 ইংল্যান্ড বাসকালে দ্বিজেন্দ্রলাল “Lyrics of Ind” ২৯ নামে একখানি ইংরেজি কবিতা পুস্তক প্রকাশ করেন। তথায় তিনি ইংরেজি সঙ্গীতবিদ্যা ও রচনা শিক্ষা করিয়াছিলেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি “Crops of Bengal”৩০ নামক কৃষিবিদ্যা বিষয়ক একখানি ইংরেজি পুস্তক প্রণয়ন করেন।

 জীবনের শেষভাগে তাঁহার বিখ্যাত চন্দ্রগুপ্ত'৩১ এবং ‘পরপারে’, ৩২ নাটক প্রকাশিত হয়। 'ভীষ্ম',' ৩৩ ‘সিংহল বিজয় ৩৪ ও ‘বঙ্গনারী’, ৩৫ এই তিনখানি পুস্তক তাঁহার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। ‘মন্ত্র’, ‘আলেখ্য'৩৭ ও 'ত্রিবেণী” তাঁহার আগের লেখা।

 সাহিত্য আলোচনার জন্য তিনি একটি নূতন ধরনের সাহিত্য মজলিস সৃজন করেন। তাঁহার নাম হয় “পূর্ণিমা মিলন”৩৯। ইহা ছিল সাহিত্যসেবীদের আলাপ-পরিচয় ও ভাবের আদান-প্রদানের মাসিক সম্মিলন।

 দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্য প্রতিভা যে কত বড় ছিল তাহা পরিমাণ করা যায় না। ১৩২০ সালে তিনি দেশের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ মাসিক পত্র “ভারতবর্ষের”৪° সম্পাদক হইয়া তাহা প্রকাশে অগ্রসর হন এবং তাহারই কার্যে ব্যাপৃত থাকাকালীন হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ায় পরলোক গমন করেন। তাঁহার মৃত্যুতে বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার যে ক্ষতি হইয়াছে তাহার আর পূরণ হইবে কি না সন্দেহ।