পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনচন্দ্ৰ পাল ১৯০৫ খ্রিস্টােব্দ বাংলা দেশের পক্ষে এক স্মরণীয় বৎসর। যে কোনো দেশেই প্ৰথম যখন জাতীয়তা-প্রচার আরম্ভ হয়, তখন সে দেশ আপনাকে যেভাবে জাতীয়তার সহিত মিশাইয়া দেয়, তাহা সেই দেশ ও জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকে। সেইজন্যই বাংলাদেশের ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে উল্লেখযোগ্য। ঐ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে যে জাতীয়তা-প্রচার-কাৰ্য আরম্ভ হইয়াছিল, সেই প্রচার-কার্যের সহিত বহু বাঙালির নাম ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট হইয়া রহিয়াছে। আমরা এখানে যে দেশপ্রেমিকের কথা বিবৃত করিব, সেই স্বৰ্গত মনীষী বিপিনচন্দ্ৰ পাল মহাশয় উক্ত প্রচারকর্যের একজন প্রথম ও প্রধান সহায়ক ছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৭ নভেম্বর শ্ৰীহট্ট জেলার পাইক নামক গ্রামে বিপিনচন্দ্ৰ পাল মহাশয় জন্মগ্রহণ করেন। তঁহার পিতা রামচন্দ্ৰ পাল গভর্নমেন্টের চাকরি করিতেন--তিনি মুনসেফ ছিলেন। শ্ৰীহট্ট গভর্নমেন্ট স্কুলে প্রথম শিক্ষালাভের পর বিপিনচন্দ্ৰ কলিকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষালাভ করিতে আসেন। সে সময়ে “সঞ্জীবনী”।* সম্পাদক কৃষ্ণকুমার মিত্র, খ্যাতনামা দেশসেবক ও অ্যাটনি ভুপেন্দ্রনাথ বসু, সিটি কলেজের প্রিন্সিপাল হেরম্বচন্দ্র মৈত্ৰত প্রভৃতি তাহার সহাধ্যায়ী ছিলেন। কলিকাতায় সে সময়ে ব্ৰাহ্মসমাজের প্রভাব অত্যন্ত অধিক ছিল ; সেজন্য বিপিনচন্দ্ৰ ব্ৰাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন ও ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু পুত্রের এই ধর্মত্যাগ হিন্দু পিতা সহ্য করিতে পারেন নাই-তিনি তৎক্ষণাৎ পুত্ৰকে ত্যাজ্যপুত্ৰ বলিয়া ঘোষণা করেন। পিতা পুত্রের সহিত সকল সম্পর্ক ত্যাগ করায় পুত্রকে দারুণ অর্থকষ্টে পতিত হইতে হইল। এফ. এ পাশ করার পর আর তঁহার কলেজের বেতন দিবার সামর্থ্য ছিল না। কাজেই তিনি কটক কলেজে অধ্যাপকের কাজ গ্রহণ করেন। কিন্তু সে কাজ অধিক দিন স্থায়ী না হওয়ায় তিনি ব্যাঙ্গালোরে “নারায়ণস্বামী মুদালিয়ার” বিদ্যালয়ে শিক্ষকের কার্য করিতে বাধ্য হন। কিন্তু শিক্ষকতা অপেক্ষা মহৎ কাৰ্য সম্পাদনের জন্য বিপিনচন্দ্রের জন্ম হইয়াছিল। শিক্ষকতার মোহ তাহাকে অধিক দিন আটকাইয়া রাখিতে পারে নাই। তিনি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় বহু ব্ৰাহ্মা তাহার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হইয়াছিলেন। ঐ সময়ে ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পিতা ভুবনমােহন দাশ মহাশয় ‘ব্রাহ্মা জনমত”* নামে কলিকাতায় একখানি সংবাদপত্র প্রকাশ করিয়াছিলেন। বিপিনচন্দ্রের বন্ধুগণ তঁহার জন্য ঐ কাগজের সম্পাদন ভার সংগ্ৰহ করিয়া ভঁাহাকে সংবাদ প্ৰদান করিলে বিপিনচন্দ্ৰ