পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 2 বঙ্গ-গৌরব অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া কৃষ্ণদাসও পিতার ব্যবসায়ে যোগদান করিবেন, ইহাই ঈশ্বরচন্দ্রের অভিপ্ৰায় ছিল ; ইহার অধিক কিছু তিনি কল্পনাও করিতে পারেন নাই। তদনুসারে তিনি কৃষ্ণদাসকে পাড়ার একটি পাঠশালায় শিক্ষালাভার্থ প্রেরণ করেন। কৃষ্ণদাসের মত মেধাবী বালক এই পাঠশালায় প্রবেশ করিয়া দেড় বৎসরের মধ্যেই গুরুমহাশয়ের সমস্ত বিদ্যা অধিগত করিয়া ফেলেন। তঁহার এমন স্মরণশক্তি ছিল এবং তিনি পাঠে এমন অভিনিবিষ্ট হইতেন যে, পড়িবার সময় তিনি এমন একমনে পাঠাভ্যাস করিতেন যে, সে সময়ে কেহ তাহাকে ডাকিলে বা কোনো কথা বলিলে তাহা তাহার কৰ্ণে পৌছিত না। এমনই অধ্যবসায় এবং একাগ্ৰচিত্তে তিনি পাঠাভ্যাস করিতেন যে, তাহার পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন তাহার এই একাগ্রতা ও তন্ময়তা দেখিয়া আশ্চর্য বোধ করিতেন। সেই সময়েই সকলে বুঝিতে পারিয়াছিল, বাঁচিয়া থাকিলে এই বালক একজন মানুষের মত মানুষ হইবে। এমন মেধাবী, এমন একাগ্ৰচিত্ত, এমন জ্ঞানপিপাসু বালক যে দেড় বৎসরের মধ্যেই পাঠশালার সমস্ত বিদ্যা আয়ত্ত করিয়া লইবে, তাহা আশ্চর্য बाgङ् । ঈশ্বরচন্দ্ৰ পূর্বে মনে করিয়াছিলেন, এই পাঠশালার বিদ্যাই তাহার পুত্রের পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু যখন তিনি দেখিলেন যে, বালকের বিদ্যাশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বিশেষ বলবান, তখন তাহাকে অন্য উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রেরণ করাই তিনি কর্তব্য মনে করিলেন। সে সময় এখনকার মত পাড়ায় পাড়ায় বিদ্যালয় ছিল না। তখন ‘ওরিয়েস্টাল সেমিনারি’, ই প্রধান বিদ্যালয় ছিল। এই বিদ্যালয় কঁসারিপাড়া হইতে দূরেও ছিল না। ওরিয়েন্টাল সেমিনারিকে সে সময় লোকে গৌরমোহন আডিরই স্কুল বলিত; এখনও অনেকে ঐ বিদ্যালয়কে উক্ত নামে অভিহিত করিয়া থাকে। প্ৰসিদ্ধ ধনী ও বিদ্যোৎসাহী গৌরমোহন আঢ্য মহাশয় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বিদ্যালয়ে ছোট বালকদিগের শিক্ষার জন্য একটু উন্নত ধরনের একটা পাঠশালাও ছিল। কৃষ্ণদাসকে প্রথমে সেই পাঠশালায় ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। তখন কৃষ্ণদাসের বয়স সাত বৎসর উত্তীর্ণ হইয়াছে। কৃষ্ণদাস এই পাঠশালায় তিন বৎসর পড়িয়াছিলেন ; কিন্তু এই তিন বৎসরেই তিনি পাঠশালার সমস্ত শিক্ষণীয় বিষয়ে বুৎপন্ন হইয়াছিলেন। স্কুলের শিক্ষকগণ এই মেধাবী বালকের তীক্ষাবুদ্ধি এবং অধ্যবসায় দর্শনে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলেন। তঁহার বিনয়-নিম্র ব্যবহার, তাহার লেখাপড়া শিখিবার আগ্রহ, তাহার জ্ঞানানুরাগ তীহাকে বিদ্যালয়ে সকলের প্রিয় করিয়াছিল। অত বড় স্কুলের মধ্যে নিম্ন পাঠশালার ছাত্র কৃষ্ণদাসকে সকলেই চিনিত, সকলেই তাহকে ভালবাসিত। কৃষ্ণদাস প্রত্যেক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করিতেন। তাহার ফলে এই পাঠশালার শেষ পরীক্ষায় কৃষ্ণদাস বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করায় একটি পদক পাইলেন। সে সময় এই পদক লাভ সৌভাগ্য বলিয়া লোকে মনে করিত। এই পাঠশালার পাঠ যখন শেষ হইল, তখন কৃষ্ণদাসের পিতা ঈশ্বরচন্দ্ৰ পুত্রকে ছেলের পক্ষে আর অধিক লেখাপড়া শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করিলেন না।