পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SqbY বঙ্গ-গৌরব প্রায় দুই বৎসর মর্গান সাহেবের নিকট শিক্ষালাভ করিয়া কৃষ্ণদাস সেই সময়ে এ দেশের বড়লোকদিগের স্থাপিত “হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজে'* প্রবিষ্ট হন। কিন্তু তাহার প্রবেশের দুই বৎসর পরে প্রসিদ্ধ সিপাহি বিদ্রোহের* পূর্বে এই কলেজটি উঠিয়া গেল, কৃষ্ণদাসের কলেজে পড়াও শেষ হইল। কিন্তু তিনি তখনও পাঠে অবহেলা করিলেন না ; ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিত হইতে নানা বিষয়ের পুস্তকাদি আনিয়া ঘরে বসিয়া পড়িতে লাগিলেন। এই সময়ে তিনি কয়েকটি বন্ধু লইয়া একটি সমিতি স্থাপিত করিলেন। এই সমিতিতে নানা বিষয়ের প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা হইত। ইহার ফলে তিনি ভাল। ইংরেজি লিখিতে ও বলিতে শিক্ষা করিতে লাগিলেন। কিছুদিন পরে এই সভার এমন উন্নতি হইল যে, তৎকালীন প্ৰসিদ্ধ বক্তা সুপণ্ডিত মিঃ কার্কপ্যাটুরিকা ও সুবিখ্যাত পণ্ডিত মিঃ কাওয়েল”, পর্যন্ত এই সমিতিতে উপস্থিত হইয়া মধ্যে মধ্যে বক্তৃতা দিতেন এবং প্রবন্ধ পাঠ করিতেন। ১৮৫৬ অব্দের ১ জুন সুপ্ৰসিদ্ধ হেয়ার সাহেবের মৃত্যুদিন যে সভা হয়, সেই সভায় কৃষ্ণদাস ইয়ং বেঙ্গল’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৮৪২ অব্দে হেয়ার সাহেবের মৃত্যু হয়। তাহার পর প্রতি বৎসরই উক্ত মহাত্মার স্মৃতি-সভা হইয়াছে, বক্তৃতাও হইয়াছে ; কিন্তু, ১৮৫৬ অব্দের স্মৃতি-সভায় কৃষ্ণদাস যে বক্তৃতা পাঠ করিয়াছিলেন, তাহা সর্বাপেক্ষা সুন্দর হইয়াছিল। এই প্ৰবন্ধ উপলক্ষে সংবাদপত্রে বাদানুবাদ উপস্থিত হইয়াছিল। কৃষ্ণদাস বলিয়ছিলেন যে, সর্ব বিষয়ে ইংরেজের অনুকরণ করিয়া এ দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ স্বেচ্ছাচারী হইয়া পড়িতেছেন, সামাজিক আচার-ব্যবহারে ঘোর অনাচারী হইতেছেন। সেই সময় সাহেবদিগের পরিচালিত 'ফ্ৰেণ্ড অব ইণ্ডিয়া'র * যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। সেই পত্রিকার সম্পাদক মিঃ মেরিডিথ টাউনসেন্ড কৃষ্ণদাসকে অযথা গালি দিয়া এক প্ৰবন্ধ লিখিলেন। কৃষ্ণদাস এই প্রবন্ধের প্রতিবাদ করিলেন না, প্রতিবাদ করিলেন তাহার অধ্যাপক কাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসন **। এই সময় হইতেই কৃষ্ণদাসের নাম শিক্ষিত সমাজে প্রচারিত হইয়া পড়িল। তখনও অর্থে পার্জন হয় নাই। পিতার অবস্থা এমন ভাল নহে যে, তিনি ঘরে বসিয়া সাহিত্য চর্চা করিলে ভরণ পোষণ চলিয়া যাইবে, সুতরাং কৃষ্ণদাসকে চাকুরির চেষ্টায় প্ৰবৃত্ত হইতে হইল। এত লেখাপড়া শিখিয়া সামান্য দোকানদারি করিতে র্তাহার ইচ্ছা! হইল না। এই সময় (১৮৫৭ অব্দে) আলিপুর জজ আদালতে অনুবাদকের পদ খালি হওয়ায় তিনি ঐ কার্য পাইলেন; কিন্তু অধিক দিন এই চাকুরিতে থাকিতে পারিলেন। না | কলিকাতায় সেই সময়ে বড় বড় জমিদার ও শিক্ষিত ব্যক্তিগণের একটি সভা ছিল; তাহার নাম “ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’। ১১ সে সভা” এখনও আছে ; এবং তাহা এ দেশের জমিদার ও শিক্ষিত ব্যক্তিগণের মুখপাত্ৰ বলিয়া এখনও সম্মান লাভ করিয়া

  • বর্তমানে লুপ্ত।