পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8* বঙ্গ-গৌরব পদ দিতে চাহিয়ছিলেন। কিন্তু আশুতোষ বলিলেন, এ কাজে বিলাত-ফেরত অধ্যাপকেরা যে বেতন পান তাহাকেও যদি সেই বেতন দেওয়া হয় এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে র্তাহাকে স্থানান্তরিত করা হইবে না। এই প্ৰতিশ্রুতি যদি গবর্নমেন্ট দেন, তবেই তিনি উক্ত পদ গ্রহণ করিতে পারেন। বলা বাহুল্য। অতঃপর তাহার অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করা হয় নাই। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষায় পাশ করিয়া আশুতোষ হাইকোর্টে ওকালতি আরম্ভ করেন। এই সময় তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতার* মৃত্যুতে মুখোপাধ্যায়-পরিবার শোকে একেবারে ভাঙিয়া পড়ে। পুত্রের মৃত্যুর পর গঙ্গাপ্রসাদ দুই বৎসর কোনো রকমে বঁচিয়া ছিলেন, তারপর তিনিও পরলোক গমন করেন। পিতার স্মৃতি-রক্ষার জন্য আশুতোষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আড়াই হাজার টাকা দান করিয়াছিলেন। এই টাকার আয় হইতে একটি স্বর্ণপদক তৈয়ারি করিয়া বি.এস-সি অনারে যিনি পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নে প্রথম হইবেন, তঁহাকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা হইয়াছে। হাইকোর্টে ওকালতি করিবার সময় আশুতোষ কিছুদিন ডাক্তার রাসবিহাৱী ঘোষের “আর্টিকেল ক্লাৰ্ক’ ছিলেন। এই সময় আইন সম্বন্ধে যাহা জ্ঞাতব্য, তাহা তন্ন-তন্ন করিয়া জানিয়া লইয়াছিলেন। এই জানার ফলে মৌলিক প্ৰবন্ধ রচনার দ্বারা ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ ডক্টর-অব-ল উপাধি লাভ করেন। অল্প দিনের ভিতরেই আইনের সুগভীর জ্ঞান ও অনন্যসাধারণ প্ৰতিভার জন্য র্তাহার সুনাম চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে এবং তঁহার আয় মাসিক প্ৰায় দশ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এই সময়ে গভর্নমেন্ট তাহকে হাইকোর্টের জজিয়তি গ্ৰহণ করিবার জন্য প্রস্তাব করেন। মাতার অনুমতি লইয়া আশুতোষ অর্থের পরিবর্তে সম্মানকেই বরণ করিয়া লইলেন; সে সম্মান তিনি পূর্ণমাত্রায় লাভ করিয়াছিলেন। জজ হিসাবে আশুতোষ যে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন, কলিকতা হাইকোর্টের কোন জজের ভাগ্যে সেরাপ প্ৰতিষ্ঠা লাভ ঘাঁটিয়াছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু আশুতোষের সর্বাপেক্ষা বড় কীর্তি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহার নিজের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান বলিলেও অতুক্তি হয় না। তিনি ২৪ বৎসর বয়সে ইহার সদস্য হইয়াছিলেন। তৎপর আমরণ তিনি কখন সদস্যরূপে, কখন বা ভাইস-চ্যান্সেলার রূপে ইহাকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছেন। ঘন্টার পর ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে তাহার কাটিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণের চিন্তায় তিনি বিশ্রামের কথা ভুলিয়ছিলেন, স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখেন নাই। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উন্নতি যে তাহার চেষ্টার ফল, তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। 'পোস্ট-গ্রাজুয়েট' বিভাগের সৃষ্টি, বিজ্ঞান কলেজ স্থাপনা, স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠা এ সমস্তই তাঁহারই চেষ্টা ও উদ্যমের ফল। র্তাহার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় কতকটা পরীক্ষা গ্রহণের কেন্দ্রের মত ছিল। তিনিই ইহাকে শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করিয়া গিয়াছেন। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা নানা বিষয়ে শিক্ষালাভ করিয়া ধন্য হইতেছে।

  • হেমন্তকুমার, তিনি বি.এ. পরীক্ষা পাশ করেছিলেন। মাত্ৰ ২০ বছর বয়সে মায়া যান।