পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰফুল্লচন্দ্র রায় খুলনা জেলায় অন্তর্গত রাডুলী কাটিপাড়া নামক একটি ক্ষুদ্র গ্রামে এক সম্রান্ত এবং বিখ্যাত হিন্দু পরিবারে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ জন্মগ্রহণ করেন। তঁহার পিতা স্বগীয় হরিশচন্দ্র রায় একজন জ্ঞানী, বিদ্বান এবং বুদ্ধিমান লোক ছিলেন। সামাজিক বহু ব্যাপারে তাহার মত অত্যন্ত উদার ছিল। ইংরেজি শিক্ষার প্রথম যুগে খুলনায় ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কৃষ্ণদাস পাল প্রভৃতি সমসাময়িক বহু মনীষীর সহিত র্তাহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। তিনি স্বগ্রামে একটি মডেল বাংলা বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন এবং আজীবন নিজ ব্যয়ে তাহার পরিচালনা করিয়া গিয়াছেন। এই স্কুলটি এক্ষণে মডেল উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হইয়াছে। প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ তাহার পিতৃপিতামহের প্রাচীন বাসভবন এই স্কুলের জন্য ছাড়িয়া দিয়াছেন। ইহার জন্য তাহাকে প্রতি বৎসর বহু অর্থও ব্যয় করিতে হয়। অট্টালিকাটি এখন বহু স্থানে জীর্ণ। তথাপি উহা এখনও খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ অট্টালিকাগুলির অন্যতম। প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ প্ৰথমে এই গ্ৰাম্য বিদ্যালয়েই শিক্ষা আরম্ভ করেন। কিন্তু সুশিক্ষার সুবিধার জন্য হরিশচন্দ্ৰ শীঘ্রই কলিকাতায় বাসা করিলেন। ইহার পর তঁহাকে হেয়ার স্কুলে ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। এই স্কুলে চারি বৎসর অধ্যয়ন করার পর রোগে আক্রাস্ত হইয়া প্রফুল্লচন্দ্ৰ প্ৰায় দুই বৎসর শয্যাশায়ী ছিলেন। র্তাহার স্কুলে যাওয়া ইহাতে বন্ধ হইল বটে, কিন্তু পড়াশুনা বন্ধ হইল না। রোগশয্যায় পড়িয়াও তিনি পিতার লাইব্রেরির বহু বই পড়িয়া শেষ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। রোগমুক্ত হওয়ার পর তীহাকে এলবার্ট স্কুলে ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। ] w এই সময়ে ব্রাহ্মধর্ম-প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের বক্তৃতা শুনিয়া প্ৰফুল্লচন্দ্রের মনে ব্ৰাহ্মধর্মের প্রতি অনুরাগ জাগিয়া উঠে। তারপর ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্ৰাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। স্বগীয় আনন্দমোহন বসু, ১ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির বক্তৃতা এই সময়ে তাহার মনে স্বদেশপ্রেমের বীজও বপন করিয়াছিল। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউসনে ভরতি হন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন এই কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ইতিমধ্যে প্রফুল্লচন্দ্রের পৈতৃক সম্পত্তি অনেক পরিমাণে নষ্ট হইয়া যায়। সুতরাং পুত্রকে বিলাত পাঠাইয়া হরিশচন্দ্ৰ যে সুশিক্ষা দিতে পরিবেন তাহার সম্ভাবনাও রহিল না। কিন্তু পুত্র নিজের বিলাতের খরচ নিজেই সংগ্ৰহ করিয়া লইলেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে গিলক্রীস্ট বৃত্তি লাভ করায় তাহার বিলাতযাত্রার আর কোনো অসুবিধা হইল না।