পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A 8 বঙ্গ-গৌরব প্রফুল্লচন্দ্ৰ ছয় বৎসর বিলাতে অধ্যয়ন করেন। সাহিত্য এবং ইতিহাসের প্রতি র্তাহার গভীর অনুরাগ ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানে উন্নতি ব্যতীত ভারতবর্ষের উন্নতি যে সম্ভব নহে, এ সত্য কলেজে অধ্যয়নের সময়ই তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন। তাই বিলাত গিয়া সাহিত্য বা ইতিহাসের দিকে না কুঁকিয়া তিনি বিজ্ঞানের চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে র্তাহাকে ডি. এস-সি উপাধি দেওয়া হয়। এখানে তিনি দুইজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের ছাত্র ছিলেন। তঁহাদের শিক্ষাগুণেই তাহার মন বিশেষভাবে রসায়ন শাস্ত্রের দিকেই আকৃষ্ট হইয়া পড়ে। তিনি ইংল্যান্ডের রাজনীতি ও ভারতের অর্থনীতিশাস্ত্ৰ বেশ ভাল করিয়া অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। ফলে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বি. এস-সি পরীক্ষা দেওয়ার অব্যবহিত পূর্বে “বিদ্রোহের পূর্বে এবং পরে ভারতের অবস্থা”২ নাম দিয়া তাহার একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে সময়ে তাহার এই রচনার যথেষ্ট সমাদর হইয়াছিল। বিলাতের বহু মনীষী রচনাটির বিশেষ প্রশংসা করিয়াছিলেন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ ভারতবর্ষে ফিরিয়া আসেন। তাহার পরেই তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এই সময় হইতেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা তাহার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হইয়া উঠে। এই কলেজের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রায় দশ বৎসর সাধনা করিয়া তিনি যে সমস্ত ফললাভ করিয়াছিলেন, “প্রেসিডেন্সি কলেজের রাসায়নিক গবেষণা” নাম দিয়া তাহা পুস্তকাকারে প্রকাশিত করা হয়। ইহাই তাহার বিজ্ঞান সম্বন্ধে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। এই গ্রন্থ প্রকাশের ফলে ভারতের একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক হিসাবে তঁহার যশ দেশবিদেশে ঘোষিত হয়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা গভর্নমেন্ট প্রফুল্লচন্দ্ৰকে ইউরোপের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসমূহ পরিদর্শন করিবার জন্য প্রেরণ করেন। সেখানকাব রাসায়নিক ও বিদ্বজন-সমাজে তিনি বিশেষ সমাদরে অভিনন্দিত ও অভ্যর্থত হহয়ছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্রের ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসে’রষ্ট প্রতিষ্ঠা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। বাঙালির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও বিদেশ হইতে আমদানি হয় এবং তাহার ফলে বহু অর্থ দেশের বাহিরে চলিয়া যায়। এই অর্থশোষণ প্ৰফুল্লচন্দ্রের মনে যে আঘাত করিয়াছিল, তাহতেই এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব। মাত্র আট শত টাকা মূলধন লইয়া কারখানাটি স্থাপিত হইয়াছিল; আর আজ ইহাতে লক্ষ লক্ষ টাকা মূলধন খাটিতেছে। প্রথম বেঙ্গল কেমিক্যাল প্ৰফুল্লচন্দ্রের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। কিন্তু ইহা যখন বিস্তার লাভ করিয়া বিপুল লাভের বিষয় হইয়া পড়িল, তখন ইহার উপর হইতে তিনি নিজের অধিকার তুলিয়া লইয়াছেন। বেঙ্গল কেমিক্যাল আজ যৌথ-করবার। দেশের বহুলোকে ইহার লভ্যাংশ ভোগ করিতেছে। বেঙ্গল কেমিক্যাল ব্যতীত আরও অনেক শিল্প-অনুষ্ঠানের সহিত প্ৰফুল্লচন্দ্রের নাম আজ সংযুক্ত। প্রফুল্লচন্দ্র বাংলার ব্যবসায়-ক্ষেত্রে নবযুগের প্রবর্তন করিয়াছেন।