পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
বহুবিবাহ।

করিয়া গৃহস্থ হইবেক, গৃহস্থ হইয়া বানপ্রস্থ হইবেক, বানপ্রস্থ হইয়া পরিব্রাজক হইবে; যদি বৈরাগ্য জন্মে, ব্রহ্মচর্যাশ্রম, কিংবা গৃহস্থাশ্রম, অথবা বানপ্রস্থাশ্রম হইতে সন্ন্যাস আশ্রয় করিবেক”। প্রথমে অবিরক্ত অজ্ঞের পক্ষে কালভেদে আশ্রমচতুষ্টয়ের বিধি প্রদান করিয়া, বিরক্তের পক্ষে যে কোনও আশ্রম হইতে পরিব্রজ্যাবলম্বনরূপপক্ষান্তর প্রদর্শিত হইয়াছে।

 যদি বল, ব্রহ্মচর্য্যের পর পরিব্রজ্যা অবলম্বন অঙ্গীকার করিলে মনুবাক্যের সহিত বিরোধ উপস্থিত হয়। যথা “ঋণত্রয়ের পরিশোধ করিয়া, মোক্ষে মনোনিবেশ করিবেক; ঋণ পরিশোধ না করিয়া, মোক্ষপথ অবলম্বন করিলে, অধোগতি প্রাপ্ত হয়। বিধিপূর্ব্বক বেদাধ্যয়ন, ধর্ম্মতঃ পুত্রোৎপাদন এবং যথাশক্তি যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়া, মোক্ষে মনোনিবেশ করিবেক। বেদাধ্যয়ন, পুত্রোৎপাদন ও যজ্ঞানুষ্ঠান না করিয়া, দ্বিজ মোক্ষকামনা করিলে, অধোগতি প্রাপ্ত হয়”। বেদে ঋণত্রয় দর্শিত হইয়াছে; যথা, “ ব্রাহ্মণ জন্মগ্রহণ করিয়া, ব্রহ্মচর্য্য দ্বারা ঋষিগণের নিকট, যজ্ঞ দ্বারা দেবগণের নিকট, পুত্রদ্বারা পিতৃগণের নিকট ঋণে বদ্ধ হয়; যে ব্যক্তি পুত্রোৎপাদন, যজ্ঞানুষ্ঠান ও ব্রহ্মচর্য্য নির্ব্বাহ করে, সে ঐ ত্রিবিধ ঋণে মুক্ত হয়'। এ আপত্তি হইতে পারে না, কারণ, উল্লিখিত মনুবচনসকল অবিরক্ত ব্যক্তির পক্ষে, সুতরাং বিরোধের সম্ভাবনা নাই; এজন্য, জাবালশ্রুতিতে বিরক্ত ব্যক্তির পরিব্রজ্যা অবলম্বন বিষয়ে কালবিলম্ব নিষিদ্ধ হইয়াছে; যথা, “যে দিন বৈরাগ্য জন্মিবেক, সেই দিনেই সন্ন্যাস আশ্রয় করিবেক"।

 যে সমস্ত প্রমাণ প্রদর্শিত হইল, কিঞ্চিৎ অভিনিবেশ সহকারে, তৎসমুদয়ের আলোচনাপূর্ব্বক, সকলে বিবেচনা করিয়া দেখুন, মিতাক্ষরাধৃত একমাত্র বচনের যথাশ্রুত অর্থ আশ্রয় করিয়া, শ্রীমান্‌ তর্কবাচস্পতি মহোদয় গৃহস্থাশ্রম কাম্য, নিত্য নহে, এই যে ব্যবস্থা করিয়াছেন, তাহা শাস্ত্রানুমত ও ন্যায়ানুগত হইতে পারে কি না।

 যেরূপ দর্শিত হইল, তদনুসারে, বোধ করি, গৃহস্থাশ্রমের নিত্যত্ব এক প্রকার সংস্থাপিত হইল; সুতরাং “গৃহস্থাশ্রমের রাগপ্রাপ্ততাবশতঃ গৃহস্থাশ্রমপ্রবেশমূলক বিবাহও রাগপ্রাপ্ত, সুতরাং উহা কাম্য বলিয়াই পরিগণিত হওয়া উচিত,” তর্কবাচস্পতি মহাশয়ের এই