পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 రిఫి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড খুলনায় পাক বাহিনীর নরমেধযজ্ঞ দৈনিক বাংলা ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ খুলনায় পাক বহিনীর নরধেমযজ্ঞ ৷ নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত ॥ খুলনাঃ খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে রেল ষ্টেশন ও রেল লাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল বাঙ্গালী নিধনের আর একটি ঘাঁটি। এপ্রিল মে মাসে জল্লাদ সৈন্যরা খুলনা রেলষ্টেশন এলাকাতে বহু বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ছিল প্রদেশের অন্যত্র থেকে আসা ট্রেনের যাত্রীরা। প্রথমে তাদের সর্বস্ব লুট করা হতো। তারপর হত্যা করা হতো এবং সেই সব মৃত দেহগুলির পেট চিরে নদীতে ফেলে দেয়া হতো যাতে করে লাশ নদীর গভীরে তলিয়ে যায়। রেলষ্টেশন ও ষ্টীমার ঘাটগুলির শক্ত সবল মুটে শ্রমিকেরাই তাদের হাতে মারা গিয়েছে সর্বাধিক। রেল কলোনী এলাকাতে প্রাধান্য ছিল পাকসেনাদের সহযোগী একদল অবাঙ্গালীদের। ঐ সময়ে রেল কলোনী এলাকাতে দিনে বা রাতে যখনই কোন বাঙ্গালী গিয়েছে, সে আর ফেরেনি কোন দিনও। তাকে হত্যা করে পুতে রাখা হতো। বহিরাগত লঞ্চ-ষ্টীমারের যাত্রীরাই হয়েছে তাদের প্রধান শিকার। ঐ সব কলোনীতে বসবাসকারী অনেক বাঙ্গালী রেলকর্মচারীও হয়েছে তাদের শিকার। লুষ্ঠিত হয়েছে তাদের গৃহসামগ্রী। এই এলাকা থেকে অন্যান্য গলিত দেহের সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছিল খুলনা থানার দারোগা জনাব কাশেমের মৃতদেহটি। ডিউটি করে বাড়ী ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। এই এলাকায় আশিয়ানী হোটেলের সামনে বিরাট একটা ডোবা আছে। এই ডোবার ভেতরেও নিক্ষিপ্ত হয়েছে বহু বাঙ্গালীর মৃতদেহ। একটি গুদাম। খুলনায় বিমান হামলা চলাকালীন পথের লোকজন রেল রোডে বা রেল কলোনীতে আশ্রয় নিলেই সেখান থেকে তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করে ঐ গুদামে ফেলে দেয়া হত। ঐ সময়ে খুলনায় কেউ ভাবতে পারতো না যে রেল রোডের মত ব্যস্ত সড়কে এই ধরনের একটি গুদাম রয়েছে যেখানে বাঙ্গালীদের লাশ রোজই বেড়ে উঠেছে। ষ্টেশনরোডে ঐ সময়ে কেরোসিন বিক্রি হতো। কেরোসিন তখন ছিল আক্রা। তাই সুদুর গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ভোর থেকে লাইন দিত। কিন্তু বিমান হামলার সাইরেন বাজলেই তারা আত্মরক্ষার্থে আশপাশে আশ্রয় নিত। তারা জানতো না যে যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে রয়েছে বাঙ্গালীদের মরণফাঁদ। তাদের পাহারাদারদের সহায়তায়ও বর্বর সেনারা বাঙ্গালীদের অর্থ লুণ্ঠন ও হত্যা করতো। পাহারাদার খানরা পথেঘাটে, বাজারে ব্যাংকে সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। ঐ সব জায়গায় জল্লাদ সেনাদের কাছে। সেখানে তার সর্বস্ব লুট করে তারপর তাকে মেরে ফেলা হত। এ ধরনের হত্যা অনেক ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ম্যাটানিটি রোডের ননী, স্যার ইকবাল রোডের সিমেন্ট ব্যবসায়ী কাঞ্চন মিয়া, আরও অনেকে। এখানে শুধু ননীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনার কথা বলছি। ননীদের কন্ট্রাক্টরী ও নৌপরিবহন ব্যবসা আছে খুলনাতে। ঘটনার দিন সে ব্যাংকে গিয়েছিল ব্যবসার জন্য কয়েক হাজার টাকা তুলতে। ননী টাকাটা তুলে তার