পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8wყbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড এই কারণে তিনি ১৯৭১ সালে ১০ই মে তারিখে নিজেকে মুজিবুর রহমানের পরিবর্তে ‘দেবদাস’ নামে পরিচিত হন। তাঁর এই নাম পরিবর্তনের কথা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন এবং এর পর থেকে তার সাথে দেবদাস নামে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান। ১০ই মে তারিখে অধ্যাপক রহমান নিজেকে ‘দেবদাস’ নামে পরিচিত করেন। পাক সামরিক বাহিনী ঘটনাটি জানতে পায়। ১২ই মে তারিখে সামরিক কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক হয়। এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ‘দেবদাস’ আমাকে জানালেন যে, এখানে থাকা অবস্থায় সাধারণ সৈন্যরা তাকে অকথ্য নির্যাতন করেছে। তাঁর শরীরে, মাথায় বুটের লাথি মারা হতো। ১১ দিন ধরে অতিথি ভবনে তাঁকে নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সহকমী বন্ধুই তাঁর সাহায্যে এগিয়ে যাননি বলে তিনি আমাকে জানালেন। ঐ সময় অতিথি ভবনে সামরিক অফিসারদের অফিস ছিল। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাকবাহিনীর সহযোগী অধ্যাপক ডঃ বারী, ডঃ মকবুল হোসেন ও ডঃ মতিউর রহমানকে তিনি সামরিক অফিসারদের কাছে ব্যবহার দেখাতো, কিন্তু সাধারণ সৈন্যরা অকথ্য অত্যাচার চালাতো বলে অধ্যাপক ‘দেবদাস’ জানালেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ দিন বন্দী রাখবার পর একটি গাড়ীতে করে সামরিক কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ‘দেবদাসকে পাবনা নিয়ে যায়। পাবনায় তাঁকে ৩/৪ দিন রাখা হয়। এই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কাজী সালেহ আহমদকেও তাঁর সাথে নিয়ে যাওয়া হয়। পাবনায় সামরিক অফিসাররা অধ্যাপক ‘দেবদাসকে নানা রকম প্রশ্ন করেন। কিন্তু তিনি তাদের হয়। নাটোরে তাঁকে পুলিশ লাইনে রাখা হয়। এখানে তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চালানো হয়। কিন্তু নিজের অত্যাচারের কথা অধ্যাপক দেবদাস কিছুতেই বলতে রাজী নন। শেষে কিছুটা মৃদু হেসে তিনি বললেন, ওরা আমার উপর যে অত্যাচার করেছে, তা বলে আর কি লাভ হবে। ওরা আমার সাথে বেশ ভাল ব্যবহার দেখিয়েছে, এই বলে তিনি চুপ করে রইলেন। বুঝতে পারলাম, অত্যধিক নির্যাতনের ফলে তিনি কথার খেই মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলেন। ঠিকমত খেয়াল করতে পারছেন না পূর্বের সব ঘটনা। নাটোরে অধ্যাপক দেবদাসকে তিন মাস একটি ছোট্ট কামরায় বন্দী অবস্থায় রাখা হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর অপরাধের শাস্তিস্বরূপ নাটোর জেলখানায় তাকে আটক রাখা হচ্ছে। নাটোরে বন্দী থাকাকালীন সময়ে পাকসামরিক অফিসাররা অধ্যাপক দেবদাসকে কয়েকটি প্রশ্ন করে। সবগুলো প্রশ্নের কথা তিনি বর্তমানে মনে করতে পারছেন না। কিন্তু কয়েকটি প্রশ্নের কথা তাঁর আজও মনে আছে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল “আপনাকে ছেড়ে দিলে আপনি কাজে যোগদান করবেন কি না’? উত্তরে অধ্যাপক দেবদাস বলিষ্ঠ কণ্ঠে জানান, “তোমাদের স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে আমি কাজে যোগ দিতে রাজী নই ?“ দ্বিতীয় প্রশ্ন, আওয়ামী লীগকে বাতিল করা সম্পর্কে তোমার মতামত কি? উত্তরে তিনি জানান, “আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। সুতরাং আওয়ামী লীগকে বাতিল ঘোষণা করতে হলে নির্বাচনের পূর্বেই তা করা উচিত ছিল। নির্বাচনের পরে তাকে বাতিল ঘোষণা করবার অধিকার জনতা তোমাদের দেয়নি- তাই এটা করা মোটেই যুক্তিসঙ্গত হয়নি।”