পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Uଜ୍ଞ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে ভারত একে দখল করে নেবে কিনা? উত্তরে জনাব দেবদাস জানান, “ভারতের পাশে আফগানিস্তান, কাশীর ও বার্মার মতো ছোট ছোট রাষ্ট্র রয়েছে স্বাধীনভাবে। সুতরাং ভারত তাদের যদি দখল না করে থাকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও তাকে দখল করবে না।” নাটোরে বন্দী থাকবার সময় যে বাবুর্চি তাকে খাবার দিয়ে যেতো সে ছিল বাঙ্গালী। ঐ বাবুর্চিটি মাঝে মাঝে বাইরের জগতের খোঁজখবর ও সিগারেট এনে দিত বলে অধ্যাপক দেবদাস আমাকে জানালেন। এছাড়া নাটোরের ছোট দারোগা ছিল বাঙ্গালী। সেও মাঝে মাঝে গোপনে দেখা করতো। নাটোর জেলে বন্দী থাকাকালে অধ্যাপক দেবদাস মিলিটারীর সরাসরি হাত থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছিলেন। জেলখানার পাশ্বের একটি বাসার আনোয়ার নামে একজন ছাত্র তাঁর পরিচিত ছিল। আনোয়ার তাঁর পরিচিত অধ্যাপককে বন্দী দেখতে পেয়ে গোপনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাঁর বন্দী থাকার সংবাদটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। নাটোরে দীর্ঘ তিন মাস বন্দী থাকবার পর ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়। অধ্যাপক দেবদাস মুক্তি পেয়ে জয়পুরহাট চলে যান এবং দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত জয়পুরহাটে বোনের কাছে থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কাজে যোগ দেননি। কাজে যোগদানের ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি হেসে উত্তর দেন, কি হবে কাজে যোগ দিয়ে। বিগত ন’মাসের বেতনও তিনি এ পর্যন্ত নেননি। অত্যধিক নির্যাতনের ফলে অধ্যাপক দেবদাস বর্তমানে গুরুতররূপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাঝে মাঝে তিনি জুরে ভুগছেন। মাথায় মিলিটারীর বুটের আঘাতের ফলে তার মস্তিষ্কের গোলযোগ দেখা দিয়েছে। পূর্বের কোন স্মৃতিকে তিনি ভালভাবে স্মরণ করতে পারছেন না। এছাড়া বেশীক্ষণ কথা বলতেও তার পক্ষে কষ্ট হয়। এ অবস্থায় তিনি পুনরায় অধ্যাপনা কাজে অংশ নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দেবদাস নামে এখনও নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। জনাব মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক শাস্ত্রে এম, এ পাস করেন। ১৯৬৪ সনে তিনি মেলবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক শাস্ত্রে এম, এ ডিগ্রী লাভ করেন। করাচী ও সিলেট সরকারী কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৭ সনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।