পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

855, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ডাঃ আয়েশার হত্যাকাণ্ড নক বাংলা ২৪ জানুয়ারী, ১৯৭২ ওরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল ডাঃ আয়েশাকে মঞ্জুর আহমদ প্রদত্ত ॥ বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর শেষ মুহুর্তের উন্মত্ততার একজন করুণ শিকার তৎকালীন ষ্টেট গিয়েছিল ডাঃ আয়েশা চৌধুরীর সমস্ত শরীর। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ১৮ নং রাস্তায় ঘটেছিল সেই সর্বজন পরিচিত বাড়ীটার সামনে যে বাড়ীতে মাসের পর মাস দুঃসহ জীবন কাটিয়েছেন বেগম শেখ মুজিবর রহমান। ঘটনাটি ঘটেছিল বেগম মুজিবের অসহায় দৃষ্টির সামনেই। খান সেনাদের আত্মসমর্পণের খবর পেয়ে আরো অনেকের মতই আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠেছিলেন ডাঃ আয়েশা চৌধুরী। এতদিন গোপনে গোপনে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছেন, সাহায্য করেছেন সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে পয়সা দিয়ে তাদের এই সামান্য সাফল্যে উদ্বেলিত হৃদয় নিয়ে তিনি সেদিন চুপ করে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনি বেরিয়েছিলেন তাঁর খালু সড়ক বিভাগের সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার জনাব হাতেম আলী খানকে বাসনায় বেগম হাতেম আলী খান এবং তাদের পুত্রবধূ মাহবুবা রশিদ চপলও সাখী হয়েছিলেন সেই যাত্রায়। তাঁরা প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলেন ১৮ নং রাস্তার সেই বাড়ীতে যে বাড়ীতে বেগম মুজিব ছিলেন বন্দিনী। তাঁরা গিয়েছিলেন বেগম মুজিবকে মুক্তির খবর জানাতে। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তখনও খানসেনারা মেশিনগান উচিয়ে পাহারা দিচ্ছিল এই বাড়ীতে। আর ঠিক সেই মুহুর্তে তাঁদের গাড়ী বাড়ীটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তারা হাতের মধ্যে শিকার পেয়ে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠেছিল। মুহুর্ত মাত্র দেরী না করেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গাড়ীটার উপর। একটানা গুলিবর্ষণে তারা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল গাড়ীকে। জর্জরিত করে তুলেছিল গাড়ীর আরোহীদের গুলির আঘাতে ডাঃ আয়েশা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর নিহত হন গাড়ীর চালক মনির আহমদ। জনাব হাতেম আলী খানের পায়ে এসে গুলি লাগে। বেগম খানের লাগে হাতে। তাদের পুত্রবধূর মাথার তালু ছুয়ে গুলি চলে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি। বুলেট বিদ্ধ গুরুতরভাবে আহত জনাব ও বেগম খান এবং তাদের পুত্রবধূ কোনমতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন পাশের একটি বাড়ীতে। পরে সেখান থেকে তাঁদেরকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। মাত্র কয়েকটি ঘন্টা পরেই যারা হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে দু’হাত তুলে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল সামান্য সময় আগেই তাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকারে পরিণত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হলো দুটি শিশু সন্তানের জননী ডাঃ আয়েশা বেদোরা চৌধুরীকে।