অগ্রসর হচ্ছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ৫০ সদস্যের একটি দল এই খবর পেয়ে রাজগঞ্জ বাজারের পূর্ব দিকে পাকসেনাদের জন্য একটি এ্যামবুশ পেতে রাখে। পাকসেনারা অগ্রসর হবার পথে এই এ্যামবুশে পড়ে য়ায়। ফলে ২০জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত ও ২৭ জন আহত হয়। আহত পাকসেনা ও রাজাকারদের মাইজদী বেসামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৫শে সেম্পেম্বর আরো দুজন আহত পাকসেনা হাসপাতালে মারা যায়।
আমাদের অপর একটি গেরিলা দল লৌহজং থানার নিকট পদ্মানদীতে ১৮ হাজার মণ পাটসহ কয়েকটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এই পাটগুলো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পার্ট কলে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ফেনীর নিকট বারদিন সেতুটি ধ্বংস করে দেয়া হয়। ফলে ফেনী ও কুমিল্লার মাঝে রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
রাজাকারসহ পাকসেনাদের একটি দল রামগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুরের রাস্তায় ১০টি গাড়ীতে ১৯শে সেপ্টেম্বর অগ্রসর হচ্ছিল। এই সংবাদ পেয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে মীরগঞ্জ এবং ফজলচাঁদ হাটের নিকট পাকসেনাদের কনভয়টিকে অতর্কিত আক্রমন চালায়। এই আকস্মিক আক্রমণের ফলে পাকসেনারা মারাত্বকভাবে ভীতসন্তস্ত হয়ে ওঠে। পাকসেনারাও গাড়ী থেকে নীচে নেমে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। উভয় পক্ষের মধ্যে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। এই প্রচণ্ড যুদ্ধের ফলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এবং স্থানীয় জনসাধারনের মনোবল আরো সুদৃঢ় হয়। অপর পক্ষে পাকসেনাদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আমাদের ৬০ সদস্যর একটি গেরিলা দল ১লা অক্টোবর রায়পুরে অবস্থিত রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৪০জন রাজাকারকে নিহত করে। ১০ই অক্টোবর পাকিস্তানীদের একটি রেঞ্জার দলের লক্ষ্মীপুর থেকে রামগঞ্জ যাবার পথে আমাদের গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে রেঞ্জারদের একটি গাড়ী সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। এতে একজন রেঞ্জার নিহত হয়। এর একদিন পর পাকিস্তানীদের একটি দল সোনাইমুড়িতে তাদের গাড়ীতে আরোহণ করার সময় সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের একটি গেরিলা দল তাদের উপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড়ঘণ্টা গোলাগুলির পর ৬ জন পাক সেনা নিহত হয় ও ৩ জন আহত হয়। অবশিষ্ট পাকসেনারা সোনাইমুড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ১২ই অক্টোম্বর আমাদের গেরিলারা ফেনী থানার অন্তর্গত লেমুয়ার একজন কুখ্যাত দালালকে হত্যা করে। এই সংবাদ পেয়ে পরদিন সকালে পাকিস্তানীদের একটি শক্তিশালী দল ওই এলাকায় আসে। এবং স্থানীয় জনসাধারণের উপর নৃশংস অত্যাচার শুরু করে। আমাদের ঐ এলাকার গেরিলারা পাকসেনাদের এই অত্যাচার বন্ধ করার জন্য প্রায় ৫০জন একত্রিত হয়ে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। চারঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা পলায়ন করে আত্নরক্ষা করে। প্রায় ৭জন পাকসেনা ঐ যুদ্ধে গুরুতররুপে আহত হয়। বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র আমাদের দখলে আসে।
জুলাই এবং আগস্ট মাসে আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে কয়েকশ গেরিলা ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়ে অপারেশনের জন্য তৈরী হয়। এইসব গেরিলাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ফরিদপুর সদর এবং মাদারীপুর মহকুমার বিভিন্ন থানায় অপারেশনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এইসব দল গুলোকে নবীনগর, দাউদকান্দি হয়ে নদী পথে তাদের নিজস্ব জায়গাতে পাঠানো হয়। ৩/৪ হাজার গেরিলা ছোটছোট দলে গ্রাম্যপথে এবং নদী পথে পাকসেনাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহে অনুপ্রবেশ করে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে পৌছাতে সক্ষম হয়। শুধু একটি দল যাওয়ার পথে হোমনার নিকট পাকসেনাদের দ্বারা আক্তান্ত হয়। পাকসেনাদের গুলিতে একটি নৈাকা ডুবে যায়। ফলে ৪ জন গেরিলা শহীদ হয় এবং ৪জন আহত হয়। ৩টি স্টেনগান ও ৫টি রাইফেল পানিতে পড়ে ডুবে যায়। নিজ নিজ জায়গায় পৌছে গেরিলা দলগুলো তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। এই সময় পাকসেনারা ফরিদপুর হয়ে বরিশালের রাস্তায় যাতায়াত করতো। সেপ্টেম্বরে মাদারীপুরের একটি গেরিলা দল ভুরঘাটার নিকট একটি সড়ক সেতুতে আক্রমণ চালিয়ে সেতুটি উড়িয়ে দেয়। ফলে পাকসেনাদের বরিশাল যাতায়াতের রাস্তায় অসুবিধা সৃষ্টি হয়। এরপর গেরিলাদের আরেকটি দল নড়িয়া থানা আক্রমণ করে। সেই সঙ্গে ডাকঘর ও রেজিস্ট্রি অফিস জ্বালিয়ে দেয়। ১,৫০০মণ পাটও তারা পুড়িয়ে দেয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে গেরিলারা ভেদরগঞ্জ থানা