পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
213

আশুগঞ্জ এবং ভৈরবের ঘাঁটি খুবই শক্তিশালী ছিল। কারণ আখাউড়া, তেলিয়াপাড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসব স্থানে তাদের ১৪, ডিভিশন ছিল। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে পশ্চাদপসরণ করে। সমস্ত ফোর্স ভৈরব এবং আশুগঞ্জে একত্রিত করে। যদিও তারা সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বেশি ছিল তবুও তাদের মনোবল ছিল না বললেই চলে। ৯ই ডিসেম্বর এভাবে দূরপাল্লার কামানের গোলাগুলি চলে। ১০ই ডিসেম্বর ভোরের দিকে ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট আশৃগঞ্জের পাকিস্তানীদের প্রতিরক্ষাব্যূহের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং এক প্রকার পাকিস্তানী ফাঁদের ভিতর পড়ে যায়। তাই ১০ বিহার রেজিমেণ্টর এবং আমার ফোর্স ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট-এর দুটো কোম্পানী তাদের সে ফাঁদ থেকে মুক্ত করার জন্য দুর্গাপুরের দিক থেকে আশুগঞ্জে আক্রমণ চালায়। যখন এ আক্রমণ চলছিল তখন আমি দুর্গাপুরে। বেলা প্রায় সাড়ে দশটায় পাকিস্তানী সৈনিকরা ভৈরব পুলের আশুগঞ্জের সংলগ্ন অংশ ডিনামাইট দ্বারা উড়িয়ে দেয়। ভারতীয় এক স্কোয়াড্রন ট্যাংকও দুর্গাপুরের দিক থেকে এ আক্রমণে অংশ নেয়। যেহেতু ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট ফাঁদের ভিতরে ছিল, তাদের সে ফাঁদ থেকে উদ্ধার করার জন্য বেপরোয়াভাবে আক্রমণ চালাতে হয়। ভারতীয় ট্যাংকগুলিও পাকিস্তানী ট্যাংকবিধ্বংসী ফাঁদের ভিতরে পড়ে যায়। ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট ফাঁদ থেকে মুক্ত হবার সুযোগ পায়। কিন্তু উভয় দলেরই ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ যুদ্ধে পদাতিক ছাড়াও ভারতীয় ৪টি ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়। ১০ তারিখের এই যুদ্ধের পর আমরা আবার পিছনে ফিরে আসি এবং আশুগঞ্জ ও ভৈরব আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা নেই। ১০/১১ ডিসেম্বর রাতে যে সব পাকিস্তানী সৈন্য আশুগঞ্জে ছিল, তারা ভৈরব চলে যায়। ১১ই ডিসেম্বর ভারতীয় ১৯ পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের দুটি কোম্পানী হেলিকপ্টারযোগে নদীর অপর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ দিনই বেলা প্রায় সারে এগারোটায় ভৈরব পুলের ভৈরব সংলগ্ন অংশ ডিনামাইট দিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়। এবং তার সাথে আশুগঞ্জ আমাদের হস্তগত হয়। ভৈরব তখন অবরোধ অবস্থায় থাকে।

 সম্মিলিত কমাণ্ডের হেডকোয়ার্টারে তখন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ভৈরব অবরোধ অবস্থাতে থাকবে। এ অবরোধ আমার এক ব্যাটালিয়ন এবং ভারতীয় ৭৩ মাউণ্টেন বিগ্রেড থাকবে। আর বাকী ভরতীয় ৩১১ মাউণ্টেন ব্রিগেড এবং আমার বাকী সৈন্য ভৈরবকে পাশ কাটিয়ে নরসিংদী অভিমুখে যাত্রা করবে, যাতে খুব শিগগিরই ঢাকা দখল করা যায়। নরসিংদী দখল করার জন্য ৪ গার্ড রেজিমেণ্টকে নির্দেশ দেয়া হলো এবং তাদেরকে হেলিকপ্টারযোগে নরসিংদীতে অবতরণ করানো হলো। ৩১১ মাউণ্টেন ব্রিগেডের বাকী ব্যাটালিয়নকে (১০, বিহার এবং ১৮ রাজপুত) পদব্রজে নরসিংদীতে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আমি ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে ভৈরব এবং আশুগঞ্জে অবরোধের নির্দেশ দিয়ে তাদের মোতায়েন করি। ২য় ইস্ট বেঙ্গল এবং সেক্টর ট্রুপসদের নির্দেশ দেই যে তারা যেন পদব্রজে নরসিংদীর দিকে রওয়ানা হয়।

 ১২ই ডিসেম্বর ২য় ইস্ট বেঙ্গল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালপুর হয়ে মেঘনা নদী অতিক্রম করে রায়পুরাতে পৌঁছে। আমি আমার হেডকোয়ার্টার ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সাথে রাখি। ১২ ই ডিসেম্বর রাত আমরা রায়পুরাতে কাটাই। ১৩ই ডিসেম্বর সকালে আমরা নরসিংদী অভিমুখে রওনা হই। সেদিনই বিকেলে আমরা নরসিংদীতে পৌঁছি। নরসিংদী পৌঁছে আমরা শুনতে পেলাম যে ৪ গার্ড রেজিমেণ্ট নরসিংদী দখল করেছে। তারা এখানে হেলিকপ্টারযোগে এসেছিল। ১৩ই ডিসেম্বর আমরা নরসিংদীতে অবস্থান করি। যেহেতু ৪, গার্ড রেজিমেণ্ট নরসিংদীতে সর্ব প্রথম পৌঁছেছিল, তাই নরসিংদীর সমস্ত গাড়ী, যানবাহন তাদের হস্তগত হয়। ১৪ই ডিসেম্বর যখন আমরা ঢাকা অভিমুখে রওনা হই তখন আমাদের কাছে কোন যানবাহন ছিল না। তাই আবার আমরা পদব্রজে ঢাকা অভিমুখে রওনা হই। এ অভিযানে ৪, গার্ড রেজিমেণ্ট সম্মুখভাগে ছিল। তারা নরসিংদী ডেমরা সড়ক দিয়ে বড় পা পর্যন্ত পৌঁছে। আমি তাদের অনুসরণ না করে ২য় ইস্ট বেঙ্গলকে নির্দেশ দিলাম যে তারা যেন তারাবোর দিকে না গিয়ে ভুলতা থেকে মুরাপাড়া রুপগঞ্জ হয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়। ১৪ ই ডিসেম্বর আমার সমস্ত ফোর্স মুড়াপাড়া পৌঁছে যায়। এবং শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে বালু নদীর পাড়ে পৌঁছে যায়। ১০ বিহার রেজিমেণ্ট ঐ দিন রুপসী পৌঁছেছিল। ১৪ ডিসেম্বর আমাদের অবস্থান নিম্নরুপ ছিলঃ গার্ড এবং ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট ডেমরার পূর্ব পাড় তারাবোতে, ১০ বিহার রেজিমেণ্ট শীতলক্ষার পূর্ব পাড়ে রুপসীতে। আমার ফোর্স-এর ২য়