আউটের অর্ডার পেয়ে আমাদের পুরনো ছাউনি, যেখানে আমরা থাকতাম সেই পঞ্চবটিতে চলে গেলাম। এরপর আর কোন অপারেশনে আমি যাইনি। ব্যাটালিয়ন রেইজ করলো। আমি রিক্রুটমেণ্টে ব্রিগেডিয়ার নাসিমকে সাহায্য করতাম। ১১ বেঙ্গল রেইজ করলো অর্থাৎ এস ফোর্সকে কমপ্লিট করার জন্য। রেগুলার ব্রিগেড তৈরী হলো।
প্রশ্নঃ আপনি কতোদিন রিক্রুটিং- এ কাজ করেছেন সেখানে?
উত্তরঃ ঠিক দিন মনে পড়বে না, তাবে মূর্তিতে যোগদান করার আগ পর্যন্ত কাজ করেছি। সেখানে সেকেণ্ড ব্যাচ ট্রেনিং শুরু হয়।
সাক্ষাকারঃ মেজর শামসুল হুদা বাচ্চু[১]
১৫ই-১৬ই অক্টোবর আমাকে আগরতলা নিয়ে আসা হয় 'সি' সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে। সে সময় সেখানে দুজন অফিসারকে পাই। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন বজলুল রশীদ। তিনি পিএমএ-তে ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি পাকিস্তান থেকে এসেছেন। আগরতলা আসার পর আমাকে সি সেক্টরের কাছেই একটা কোম্পানী ছিল সেখানে পাঠানো হলো। সেখান থেকে বর্ডার মাইল দু'য়েক দূরে ছিল। এই কোম্পানীতে পুলিশ, বিডিআর সবাই ছিল। তাদের নিয়ে মাঝে মধ্যে বর্ডারে যেতাম। সামনেই এটকা ডিফেন্স ছিল। সেখানে থাকা অবস্থায়ই একবার মার্চ করে মাইল পাঁচেক ভিতরে ঢুকেছিলাম কিন্তু বেশী সুবিধা করতে পারিনী। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল রেইড করা কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রস্তুতি তেমন ছিল এবং ট্রেনিং পাকা হয়নি। তখন সেই সময় ব্রিগেডিয়ার নাসিম ১১তম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট গড়ে তোলেন এবং আমাকে তাঁর রেজিমেণ্ট নিয়ে আসেন। এই বেঙ্গলে ট্রেগু লোক অনেক ছিল। মেজর নুরুদ্দিন, মেজর আবুল হোসেন এই বেঙ্গলে ছিলেন। নভেম্বরের শেষের দিকে ১১তম বেঙ্গল যখন পুরোপুরি গড়ে ওঠে তখন আমরা সেখান থেকে মার্চ করে বাংলাদেশের ভিতর প্রবেশ করি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা। পুরো এক ব্যাটালিয়ন সৈন্যসহ হেঁটে যখন আমরা ভৈরব পার হই তখন পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে আহত হন মেজর নাসিম, চারজন ভারতীয় লোক মেজর শাফায়েত জামিল ও ভারতীয় একজন ক্যাপ্টেন। শত্রুদের সাথে জেনারেল শফিউল্লাহর হাতাহাতি যুদ্ধ হয়েছিল। এ সময়টা হচ্ছে ডিসেম্বরের ৬ কি ৭ তারিখে। সেখানে যে মেজর নাসিম আহত হয়েছিলেন তার মূলে ছিল আমাদের একজন অফিসারের ভূল পরিকল্পনা। এরপর আমদের ব্যাটালিয়নকে টেক ওভার করেন মেজর মতিন। টেক-ওভার করার পর যখন আমরা আশুগঞ্জ যাই তখন পাকিস্তানীদের সাথে সংঘর্ষ হয়।
পাকিস্তান আর্মিরা সকালবেলা আশুগঞ্জে যে ব্রীজটা ছিল সেটা উড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ইণ্ডিয়ান আর্মি মনে করেছিল যে পাকিস্তানী আর আশুগঞ্জে নেই, নদীর ওপারে ভৈরবে চলে গেছে। তখন সেখানে ১০ম বিহার ব্যাটালিয়ন ছিল। তারা দেখতে একদম কালো ছিল। তাদের সাথে ছিল ২০তম রাজপুত। আশুগঞ্জে জায়গাটা এমন যে সেখানে ৩টা কি ৪টা তিনতলা দালান ছিল এবং সামনে এক মাইলের মত জায়গা ছিল একদম ফাঁকা। ভারতীয় আর্মির ধারণা ছিল যে, সেখানে পাকিস্তনী আর্মি নেই কিন্তু আমাদের মনে হয়েছিল হয়তো পাকিস্তানী আর্মি আছে। কথা ছিল ভারতীয়দের সাথে ১১তম বেঙ্গলের একটা কোম্পানী থাকবে কিন্তু পরে এসে বললো থাক তোমাদের যেতে হবে না। তবুও আমাকে আমার কোম্পানী নিয়ে শহর থেকে আধ মাইল পরে দূরে একটু উঁচু গ্রাম ছিল, সেখানে বসে থাকার জন্য আমার এডজুটেণ্ট লেঃ নাসির বললেন। তখন সেখানে আমার সাথে ছিল ১০ম বিহারের মেজর গাঙ্গুলী (কোম্পানী কমাণ্ডার)। আমার কোম্পানী নিয়ে আমি সেখানে বসে আছি, তখন দেখি ভারতীয় সৈন্যের দুটি ব্যাটালিয়ন মার্চ করে মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে ছিল ছোট চারটা
- ↑ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প কর্তৃক ১০-১০-১৯৭৯ তারিখে গৃহীত সাক্ষাৎকার।