পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
378

 জন খানসেনা নিহত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ১ জন গেরিলা আহত হন। এই যুদ্ধে সেকেও কমাণ্ডার ছিলেন আবদুল জলিল (সাবেক ইপিআর)।

 অক্টোবরের শেষে ঝিকরগাছার ২ মাইল দূরে শিমুলিয়া সাহেববাড়িতে পাক বাহিনীসহ ২০ জন রাজাকার ঘাঁটি করে অবস্থান করছিল। সেই ঘাঁটি থেকে পেট্রোল ডিউটিতে আসে ১০ জন পাকসেনাসহ রাজাকার। এই দলের উপর আমরা আক্রমণ চালাই এবং ৩ জন খানসেনা, ১ জন বিহারী রাজাকার নিহত হয় এবং একজন রাজাকার আহত ও তিনজন জীবন্ত অবস্থায় ধরা পড়ে। পরে উক্ত তিনজন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর সাথে কাজ করে। এই আক্রমণের ফলে পাকসেনারা ঐ মিশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে নভেম্বর মাসের দিকে পাকসেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র পুনরায় ঐ গ্রামে আক্রমণ করে এবং তিন ব্যক্তিকে হত্যা করে ও বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাক সেনারা সাবেক ইপিআর আবদুল জলিল ভ্রমে উক্ত তিনজনেক হত্যা করেছিল। তার পূর্বে উক্ত এলাকা থেকে আমাদের দল চলে যায়।

 ৩রা নভেম্বর ১২ জন গণবাহিনী ও সাবেকে ইপিআর ৩০ জনকে নিয়ে ভোরের দিকে চৌগাছার বিওপির সামনে এ্যামবুশ পেতে রাখি। সেই সময় উক্ত বিওপি পাকসেনাদের দখলে ছিল। পাকসেনাদের একটা পেট্রোল পার্টির সাথে সংঘর্ষ শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। যখন পেট্রোল পার্টি ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তাদের সাহায্যের জন্য উক্ত বি-ওপি ক্যাম্প থেকে বহু পাকসেনা এসে আমাদের দলটিকে ঘিরে ফেলে এবং যুদ্ধ চলতে থাকে। নিরুপায় হয়ে তখন আমি ও আমার দলবল বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে থাকি। এই সংবাদ পেয়ে সাবেক মেজর নজমুল হুদা মুক্তিফৌজ ক্যাম্প থেকে যুবকদের নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে আসেন এবং আমাদের সাহায্য করেন। ভারতীয় সৈন্যরা দূর থেকে ৩ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে মুক্তিফৌজকে সাহায্য করে। যদিও এ্যামবুশ করে আমাদের ফিরে যাবার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু তা সম্ভব না হওয়াতে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর ফলে পাকসেনারা উক্ত বিওপি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে প্রায় ১৮/১৯ জন মৃত পাকসেনার লাশ নিয়ে যেতে সক্ষম হই। পরে জনসাধারণের আরো প্রায় ২০ জন পাকসেনারা লাশ বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। স্টেনগান, চায়নিজ রাইফেল, এলএমজি ও একটা ছোট অয়ারলেসও উদ্ধার করি। এই যুদ্ধে একজন সাবেক ইপিআর ল্যান্স নায়েক আহত হন। পরে হাত কেটে ফেলে তাকে বাঁচানো হয়।

 ১২ই নভেম্বর সন্ধ্যার সময় চৌহগাছা চোরামনকাটির মাঝামাঝি রোডে একটি গাড়ীসহ রোডের ব্রীজ উড়িয়ে দিই আমি ও আমার তিনসঙ্গী।

 গুলবাগপুর গোয়ালহাট নামক স্থানে পাকসেনারা আমার দলের উপর ঈদের দিন আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন এবং ৩ জন গণবাহিনীসহ ৩ জন সাধারণ মানুষও শহীদ হন। জনসাধারণ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। জনসাধারণ সেই সময় এই এলাকাতে সব সময় কাজ করেন মুক্তিবাহিনীর পক্ষে। সেই দিন কর্নেল মঞ্জুর ৬/৭ ঘণ্টার মধ্যে উক্ত হৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করার হুকুম দেন। আমার আক্রমণকালে পাক বিমান আক্রমণ করে। পরে ভারতীয় সৈনিকের সাহায্যে উক্ত এলাকা পুনরায় দখল করি। এরপর আমি মিত্রবাহিনীর সাথে কাজ করতে থাকি। ভারতীয় বাহিনীর আগে এবং পাক বাহিনীর সামনে থেকে মিত্র বাহিনীকে সাহায্য করি।

 ২৪শে নভেম্বর গরীবপুর গ্রামে মিত্রবাহিনীর সাথে ট্যাংকযুদ্ধ হয়। সেই সময় পাকিস্তানী ১৪টি ট্যাংক ছিল। এই যুদ্ধে ৫টি ভারতীয় ট্যাংক নষ্ট হয়ে যায়। পাকিস্তানী সমস্ত ট্যাংক নষ্ট হয়ে যায়। ১৪টি ট্যাংকের মধ্যে ৮টিকে ভারতে নিয়ে গিয়ে ছবি তোলা হয়। ২৬শে নভেম্বর চৌগাছা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।

 ৩রা ডিসেম্বর আমি কামাল ও তৌফিক সাহেব মিলে নাভারন ও ঝিকরগাছা রোডের মধ্যবর্তী স্থানে একটি জীপগাড়ী উড়িয়ে দিই। ২ জন খানসেনা নিহত হয়।