পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

508 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড মেরামত করছিল। তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশের কোন গাড়ী এদিক-ওদিক করবেনা এবং আমাদেরকে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। প্রশ্নঃ পরে আপনারা পুরো ব্যাটালিয়ন মুভ করেন কিভাবে? উত্তরঃ পরে আমরা শ্রীমঙ্গল যাই। সেখানে জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ছিলাম। পরে ২১শে ফেব্রুয়ারী চিটাগাং এ পৌছাই কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে। ইষ্ট বেঙ্গলের গর্বঃ চিলমারী যুদ্ধ ১৫ই আগস্ট ১৯৭১। আর্টিলারীসহ এক ব্যাটালিয়ন পাক হানাদার ও তিন শতাধিক রাজাকার চিলমারীতে বীর ইষ্ট বেঙ্গলের মুখোমুখি হয়। ইষ্ট বেঙ্গল ছিল কম্বাইণ্ড ফোর্স। এখানে ছিলেন সি-ও মেজর জামিল (থার্ড বেঙ্গল), সি-ও মেজর জিয়াউদ্দীন (ফাস্ট বেঙ্গল) ও সি-ও মেজর আমিনুল হক (৮ম বেঙ্গল), আর ছিল মুক্তিবাহিনীর দুটি কলাম। ১৫ই ও ১৬ই আগষ্ট হানাদার পাকবাহিনী নেক-টু নেক ফাইট করেছে তাদের মোস্ট লেটেষ্ট ও মোস্ট সফিষ্টিকেটেড আর্মস নিয়ে। কখনো বা মনে হয়েছে পাক হানাদাররা ইষ্ট বেঙ্গলে ডিফেন্সে ফাটল ধরাতে সমর্থ হবে। কিন্তু না, বাংলার বীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দাঁতে দাঁতে কামড়ে পজিশন আগলে রেখে দুদিন ধরে তাদের আক্রমণ রেসিস্ট করে গেছে। দুদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধারা জঙ্গল ও বনের ফাঁক দিয়ে সংগ্রহ করে হানাদার বাহনীর ডিফেন্সের ফাঁক-ফোকর। ১৭ই আগষ্ট চিলমারীর পূর্বদিক দিয়ে এগিয়ে গেল ৮ম বেঙ্গল। নাশ হয়ে গেল দু’টি হানাদার পজিশন। নিহত হল ৪ জন পাক হানাদার বাহিনী। জায়গা বদল করে এগুচ্ছে বীরের বাহিনী ইষ্ট বেঙ্গল শত্রর লেটেষ্ট আর্টিলারী ও সফিষ্টিকেটেড আর্মস-এর সামনে ক’টা এস-এল-আর আর থ্রি-নটুথ্রি নিয়ে। অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের ইঞ্চি ইঞ্চি করে পিছু হটাচ্ছে চিলমারীর বুক থেকে, আর গ্রামের কৃষক-জনতা সবাই তাদের পিছনে ভলান্টিয়ারের কাজ করছে। জনগনের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় উদ্দীপ্ত ইষ্ট বেঙ্গলের জোয়ানরা পাক বাহিনীর মরণ আঘাত উপেক্ষা করে প্রতি প্রহরে সামনে এগিয়েছে, নিখুত নিশানায় হানাদার বাঙ্কারে গুলি ছুড়েছে। এলো ১৯শে আগষ্ট। সারাদিনের পর সন্ধ্যায় হঠাৎ যেন দুলে উঠলো হানাদার পজিশন, বাঙ্কার। ইষ্ট বেঙ্গল ও মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শানিয়ে তুললো। বীরদৰ্পে অসীম দুঃসাহসে সন্ধ্যার অাঁধার নামার সাথে সাথে থার্ড বেঙ্গল মেজর জামিলের সাথে আরও কয়েক গজ এগিয়ে সামনের একটা হানাদার বাঙ্কার দখল করে নিল। বাঙ্কারেই হত্যা করল ৪ জন হানাদারকে। রাতের আঁধারে যুদ্ধ আরও রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র হয়ে উঠলো। পাকিস্তানী স্ট্রং আর্টিলারীর কভারিং থাকা সত্ত্বেও চিলমারীর বুক থেকে পালাতে চায় ১ ব্যাটালিয়ন হানাদার। ‘জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়ার অর্ডারঃ ‘ওদেরকে রিট্রিট করতে দেয়া হবেনা। চিলমারীর বুকে ওদের কবর হবে। মুক্তিযোদ্ধারা সন্তৰ্পণে ক্ষিপ্ত গতিতে গিয়ে পজিশন নেয় হানাদারদের পেছনে। ভোর রাতে জোর কদমে ইষ্ট বেঙ্গল ঢুকে পড়ে পাকিস্তানী বাঙ্কারে, পজিশনে, ডিফেন্স লাইনে।

  • দৈনিক ইত্তেফাক ১৯৮২ বিজয় দিবস সংখ্যায় প্রকাশিত মুসা সাদিক রচিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত।