পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
530

এলাকায় বিভক্ত করেছে। রাস্তার উপরে ব্রীজগুলো ভেঙ্গে দিলে আক্রমণকারীকে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া বিরাট এলাকা ক্রমাগতভাবে নিচু ও জলাধারে পূর্ণ। এই সমস্ত এলাকায় ভারি অস্ত্রসহ অগ্রসর হওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার।

 যুদ্ধ-কৌশল অনুযায়ী পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা ছিলো সব চাইতে বেশি, কারণ সমস্ত পাকা রাস্তা উত্তর ও পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেছে এবং বড় বড় নদীগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত। তাছাড়া পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধের সম্ভার ও যোগাগোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করেছিলো।

 মেঘালয় সীমান্ত থেকে অপেক্ষাকৃত শক্ত মাটির জন্য সৈন্য চলাচল সম্ভব ছিলো। কিন্তু গৌহাটি থেকে শিলং পর্যন্ত একটি মাত্র পাকা রাস্তা এবং তারপরই পাহাড়ী এলাকা দিয়ে সীমান্ত আসার পথ। এই এলাকায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান সম্ভব ছিলো না বলেই সৈন্য সমাবেশ ছিলো সীমিত।

 ত্রিপুরা ও শিলচর এলাকায় গোলাবারুদ ও রসদসম্ভার পর্যাপ্ত মজুত করা হয়নি। ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকা থেকে ধর্মনগর পর্যন্ত রেল লাইন বিস্তৃত। তারপর একটি মাত্র রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে আগরতলা পর্যন্ত আসা যায়। পরিষ্কারভাবে অনুমান করা যায় যে এখানে বড় ধরনের অভিযান সম্ভব ছিলো না। অক্টোবরের শেষের দিকে অবশ্য পাকিস্তানীদের ভারতীয় সৈন্য সমাবেশের কথা জানতে পারে।

 যেভাবেই হোক ভারতীয় বাহিনীকে সীমান্ত এলাকায় বাধা দিয়ে বিলম্ব ঘটানোই ছিলো নিয়াজীর পরিকল্পনা। সীমান্তে সব ক'টি পাকা রাস্তার উপরে শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করে অগ্রসরমান সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিহত করাই ছিলো এর উদ্দেশ্য। ১৪০০ মাইল বিস্তৃত সীমান্ত এলাকায় শক্ত-ঘাঁটি, প্রচুর গালাবারুদ এবং রসদপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করে নিয়াজী অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্মিলিত বাহিনীকে বিলম্বিত করতে চাইলেন।

 অন্যদিকে সম্মিলিত বাহিনী এইসব শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলো এড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। প্রথম লক্ষ্য ছিলো ক্ষিপ্রতা ও গতি। বিদ্যুৎ গতিতে খুব কম সময়ের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সীমান্তের সবদিক দিয়ে আক্রমণ পরিচালনা করে পাকসেনাদের ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য করা। তৃতীয়তঃ ছড়িয়ে পড়া পাকবাহিনী যেন একত্রিত হয়ে পদ্মা ও মেঘনার মাঝামাঝি এলাকায় সৈন্য সমাবেশ না করতে পারে তা নিশ্চিত করা। চতুর্থতঃ পাকা রাস্তা বাদ দিয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা ব্যূহকে এড়িয়ে যাওয়া। পঞ্চমতঃ মনস্তাত্ত্বিকভাবে যুদ্ধ চালিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিতে হবে-যাতে তারা যুদ্ধ না করে আত্মসমর্পণ করে।

 পাকিস্তানী সমরনায়করা সম্ভবত ভেবেছিলেন ভারত সরকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শুধুমাত্র সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি জেলা বা মহকুমা শহর দখল করেই ক্ষান্ত হবে। সম্ভবত এই কারণেই তারা সীমান্ত এলাকায় শক্ত প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করেন। পাকিস্তানী জেনারেলরা যুদ্ধের গতি ও পরিণত সম্পর্কে উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি। ফলে, ঢাকা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় বাধা দিতে ব্যর্থ হয় পাকবাহিনী। বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পলায়নপর পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে।

পাকিস্তানীদের সৈন্য সমাবেশ ছিল নিম্নরূপঃ

 যশোর এলাকাঃ নবম ডিভিশন জেনারেল আনসারীর নেতৃত্বে যশোর এলাকায় মোতায়েন করা হয়। ১০৭ ব্রিগেড যশোরে এবং ৫৭ ব্রিগেড ঝিনাইদহে অবস্থিত ছিলো। এছাড়া ২টি ফিল্ড রেজিমেণ্ট আর্টিলারী ও একটি রেকি এবং সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন ছিলো।

 উত্তর বাংলাঃ মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহের নেতৃত্বে ১৬ ডিভিশনকে উত্তর বাংলা রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৬ ডিভিশনের সদর দফতরে নাটোরে অবস্থিত ছিলো। ২৩ ব্রিগেড রংপুরে এবং ২০৫ ব্রিগেড বগুড়া