পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

608 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড নির্বাচিত হয়। কিন্তু তার আদর্শিক ফলাফল উল্টো হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানগণ আদর্শিক মৃত্যুর পথে আর একধাপ এগিয়ে গেছে। পরিষদের সদস্যপ্রার্থী মুসলমানগণ নির্বাচনের সময়ে আর তাদের এলাকায় প্রাণখুলে ইসলামী আদর্শের কথা প্রচার করতে পারে না। ভয়, তাহলে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ভোট একটিও পাবে না। যে সকল ভোটের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নহে। বরং অমুসলিম ভোটারগণের মনোরঞ্জনের জন্য, কে কত বেশী পরিমাণে ইসলামী আদর্শের জলাঞ্জলী দেবে এবং কে কত বেশী ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাবে, তা নিয়ে মুসলমান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ফল স্বরূপ দেখা যায় যে, ইসলাম আদর্শের জন্য পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার ঠেলায় সেই ইসলামী আদৰ্শই আজ ধ্বংসের মুখে। পূর্বেই বলেছি, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি হলো সর্বভারতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি অথবা আমেরিকা এবং কতিপয় ইউরোপীয় দেশে প্রচলিত রাজনীতি। এই জাতের রাজনীতি হলো পুঁজিবাদীদের তথা আধুনিক সাম্রাজ্যবাদীদের বাহন। কমু্যনিষ্ট রাষ্ট্র ব্যতীত, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ অথবা হিন্দুস্তানী সম্প্রসারণবাদ অথবা পৃথিবীর অন্য যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংগে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করেঃ যে ধরনের রাজনীতি অনায়াসেই করা যায়। মুসলমান নামের খোলসধারী পুঁজিপতিদের সুবিধার জন্য এইটুকু পাকিস্তান, আলাদা করে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। অখন্ড ভারত হতে অনায়াসেই, সমর্থ মুসলমানগণ হজব্রত সম্পন্ন করতে পারতোঃ কিন্তু পাকিস্তান থেকে হজব্রত সম্পন্ন করতে হলে, বৎসরের পর বৎসর পারমিটের জন্য বসে থাকতে হয়। অখন্ড ভারতের মুসলমানগণ বিনা বাধায় ব্যক্তিগতভাবে বা জমাতের সংগে তাদের নামাজরোজা আদায় করতে পারতো। শুধু আদায়ই নহে-নামাজের সময় ঢাক-ঢোল-কর্তাল বাজালে, হিন্দুদের সংগে খুনাখুনি হয়ে যেত। বর্তমান হিন্দুস্তানে এখনও তাই হয়। পাকিস্তানের শহরগুলিতে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানদের মাইকের আওয়াজের ঠেলায় এবং রেডিও পাকিস্তানের প্রোগ্রামের ঠেলায় পাকিস্তান-তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্রের মুছল্লিগণ সমাজ পড়তে পর্যন্ত অসুবিধা ভোগ করে। হিন্দুস্তানে যাহা অচল-ইসলাম ধর্মে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ সেই মদের ব্যবসায় আজ পাকিস্তান সচল। নারী ব্যবসার দিক দিয়ে পাকিস্তান অন্য যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ দেশের পিছনে পড়ে নাই। ঘুষ ও দুনীতির দিক দিয়ে পাকিস্তান সকলের শীর্ষস্থান দখল করছে। লাখে লাখে মুসলমানতো এই জাতের ইসলামী রাষ্ট্র অথবা অতীতের অখন্ড ভারতের অনুরূপ ধর্মনিরপেক্ষ অতীতে, পাক-ভারতের পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামী সাম্যবাদী রাষ্ট্র গঠন করার পক্ষে অন্যান্যদের সংগে ংলা ও আসামের মুসলমানগণও দ্ব্যর্থহীনভাবে রায় দিয়েছিল এবং প্রয়োজন হলে এখনও দেবে। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন এখন অবান্তর। এখন আমাদের পূর্ববর্তী রূপরেখা অনুযায়ী, রাষ্ট্র গঠন করার নিমিত্ত আলাদা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে সকল পূর্ব পাকিস্তানীর উচিত, পশ্চিম পাকিস্তানীদের তৈরী অথবা এখানকার অবাংগালাদীর তৈরী সকল প্রকার দ্রব্য বর্জন করা এবং পশ্চিমাদের ব্যাঙ্ক, বীমা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বয়কট করা। অধিকন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, চালচলন রীতিনীতি ইত্যাদি দু'রকমের এবং দুই অঞ্চলের মাঝখানে বাধাস্বরূপ প্রায় ১৫০০(পনরশত) মাইলজুড়ে একটি শত্রুভাবাপন্ন দেশ অবস্থিত। তাই অতিদূরের এই দুটি সংলগ্ন অঞ্চল নিয়ে একটি দেশ কোন মতেই ভারসাম্য বজায় রেখে টিকে থাকতে পারে না। এর সুবিধাপ্রাপ্ত অংশ সবসময় অপর অংশকে দাবিয়ে রাখবে। আল্লাহর দুনিয়াতে এই আজগুবি ধরনের স্বাধীন দেশ আর একটিও নাই। এসব কথা চিন্তা করেই আমাদের মুরবীগণ ১৯৪০ ইংরেজীতে লাহোরে বসে ঠিক করেছিলেন, দুটি অঞ্চল নিয়ে পৃথক দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হবে। পূর্বেই বলা হয়েছে, কতিপয় পশ্চিমা নেতার চক্রান্তে তাহা বাস্তবায়িত হয় নাই। একটি দেশ বা পরিবার দু’ভাবে আলাদা হয়। তার একটি হল যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে। অপরটি হলো শান্তিপূর্ণভাবে যুদ্ধবিগ্রহ একটি অদ্ভুত জিনিস। কোথায় কিভাবে সংঘটিত হয়, বলা যায় না। নেপোলিয়নের