পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

196 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড তাঁর জিজ্ঞাসা। তিনি বলেন, তাঁর দেশের কূটনীতিবিদ ও আইনসভার সদস্যরা অবগত নন এমনকি নতুন তথ্য তিনি জানতে ইচ্ছুক? লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা এবং প্রায় এক কোটি মানুষকে বাস্তুত্যাগে বাধ্য করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকারকে তাঁর প্রশাসন নিন্দা করেনি। এমন তথ্য সংগ্রাহক পাঠিয়ে কি ফল তাঁরা লাভ করতে চান, জানি না। তবে এতে আমাদের সঙ্কল্পের কোন ব্যত্যয় হবে না। সে সঙ্কল্প হল দেশকে শত্রমুক্ত করে নিজেদের অভিপ্রেত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। জনাব তাজউদ্দীন মুক্তি সংগ্রামের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ যে সর্বক্ষেত্রে তীব্রতর হয়েছে, সেকথা শক্রমিত্র নির্বিশেষে সকলেই স্বীকার করেছেন। মুক্তিবাহিনী এখন যে কোন সময়ে যে কোন জায়গায় শত্রকে আঘাত করতে পারে, এমনকি শত্রর নিরাপদ অবস্থানের কেন্দ্রে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে তাকে বিমুঢ় করে দিতে পারে। জলে স্থলে চমকপ্রদ অগ্রগতি ঘটেছে মুক্তিবাহিনীর। নদী পথে হানাদাররা বিপর্যস্ত, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় অকেজো, বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল শত্রমুক্ত। ক্রমেই অধিকতর এলাকায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর প্রশাসন চালু হচ্ছে। আর সৈন্য, সামগ্রী ও মনোবল হারিয়ে শত্রপক্ষ হতাশায় উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাক সামরিক হুঙ্কার দিশাহারা ও কোণঠাসা হয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসলামাবাদের দুস্কৃতিকারীরা দিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেই সংশয় ও ভীতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের জনগণের অপরিমেয় দুর্দশা ঘটাবার সঙ্গে সঙ্গে তারা পশ্চিম পাকিস্তানকেও টেনে নিয়ে গেছেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতক ভাঙ্গনের দিকে। এখন তারা চায় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে। তারা আশা করে যে, এমন একটি যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে পৃথিবীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিবন্ধ হবে। মুক্তিবাহিনীর হাতে তাদের পরাজয়ের গ্রানি গোপন করা যাবে এবং এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যাতে তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছি যে, এর একটি উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে না। এবং এতে তাদের ভ্রান্তি, অপরাধ ও আত্মঘাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে মাত্র এবং পাকিস্তানের আত্মবিনাশ সুনিশ্চিত হবে। সর্বশেষে জনাব তাজউদ্দীন জনগণকে মুক্তি সংগ্রামের বর্তমান পর্যায়কে চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে চলার আহবান জানান। যেসব সরকারী কর্মচারী, রাজাকার, পুলিশ বা অন্যান্য ব্যক্তি বিবেকের নির্দেশের বিরুদ্ধে হানাদারদের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাদেরকে সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সুযোগ নেয়ার আহবান জানান। শত্রপক্ষের সঙ্গে যারা স্বেচ্ছায় হাত মিলিয়েছে তাদের শেষবারের মত তিনি জানিয়ে দেন যে, বিশ্বাসঘাতকতার পথ পরিহার করুন। অনুতাপহীন বিশ্বাসঘাতকদের আর তাদের বিদেশী প্ৰভুদের পরিণতি এক হবে আর তা হলো গ্লানিকর মৃত্যু।