পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ゲ8 বাংলায় প্রমণ মিথিলার অদ্বিতীয় নৈয়ায়িক পক্ষধর মিশ্রের সহিত ন্যায়ালোচনার জন্য মিথিলা গমন করেন। কিছুদিন মিথিলায় অবস্থান করিয়া পক্ষধরের সহিত ন্যায়বিচারে জয়লাভ করিয়া রঘুনাথ শিরোমণি নবদ্বীপে ফিরিয়া আসিলেন। তাহার কৃতিত্বে নবদ্বীপ ভারতের সবর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় শিক্ষার কেন্দ্র হইয়া উঠে। “প্রামাণ্যবাদ ” “ পদার্থতত্ত্বনিরূপণ ” “ চিন্তামণি দীধিতি ” প্রভৃতি গ্ৰন্থরচনার দ্বারা নব্য ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করিয়া রঘুনাথ শিরোমণি বাংলার মুখোজ্জ্বল করিয়া গিয়াছেন। পানাগড়—হাওড়া হইতে ৯৭ মাইল। স্টেশনের পর হইতেই প্রাচীন জঙ্গল মহালের অল্প অল্প জঙ্গল দেখা যায়। পানাগড় স্টেশন হইতে অৰ্দ্ধ মাইল উত্তরে অবস্থিত কাকৃসা একটি প্রাচীন স্থান। গোপভয় রাজবংশের এক শাখা এখানে বাস করিতেন। কথিত আছে যে সৈয়দ বোখারী নামক জনৈক মুসলমান সর্দার কাঁকসার দুর্গ জয় করেন। এই দুর্গের ধবংসাবশেষ আজিও বর্তমান আছে। দুর্গের অনতিদূরে রাজার মসৃজিদৃ নামে একটি মসজিদৃ আছে। ইহার প্রস্তর গাত্রে হিন্দু ভাস্কর্য্যের পরিচয় পাওয়া যায়। অণ্ডাল জংশন—হাওড়া হইতে ১১৬ মাইল দূর। এখান হইতে একটি শাখা লাইন বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া পৰ্য্যন্ত গিয়াছে এবং অপরটি উত্তর রাণীগঞ্জের খনিঅঞ্চলে অবস্থিত গৌরাঙ্গদি পর্য্যন্ত গিয়াছে। শেষোক্ত শাখা পথে ইকড়া নামক জংশন স্টেশন হইতে অপর একটি শাখা বড়বানী হইয়া ১২ মাইল দূরবর্তী প্রধান লাইনের সীতারামপুর স্টেশনের সহিত মিলিত হইয়াছে। অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখা লাইনের উপর উখড়া, পাণ্ডবেশ্বর, দুবরাজপুর ও শিউড়ী প্রসিদ্ধ স্টেশন। উখড়া—অণ্ডাল জংশন হইতে ৮ মাইল দূর। ইহা বৰ্দ্ধমান জেলার একটি প্রধান গ্রাম ও বাণিজ্য-প্রধান স্থান। এখানে বহু সুন্দর সুন্দর দেবালয় আছে। পাণ্ডবেশ্বর-অগুলি জংশন হইতে ১৩ মাইল দূর। এখানে অজয় তীরে পণ্ডবেশ্বর নামে একটি প্রাচীন শিবলিঙ্গ আছে। প্রবাদ, বনবাসকালে পঞ্চপাণ্ডব এই অঞ্চলে কিছুকাল অবস্থান করিয়াছিলেন এবং এখানে এই শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ভীমগড় নামে একটি পুরাতন গড়ের ভগ্নাবশেষও এখানে দৃষ্ট হয়। দুবরাজপুর—অগুলি জংশন হইতে ২২ মাইল দূর। ইহা বীরভূম জেলার একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র । পিতল ও কাসার বাসন এবং জাতি ও অন্যান্য লৌহ নিৰ্ম্মিত দ্রব্যাদির জন্য এই স্থান প্রসিদ্ধ। এখানে একটি মুনসেফী আদালত আছে। এই স্থানে বহু প্রাচীন শিবমন্দির দেখিতে পাওয়া যায়। এখানকার নৈসৰ্গিক শোভা অতি সুন্দর। দুবরাজপুর অঞ্চলের বেলে পাথর প্রসিদ্ধ। এক একটি প্রস্তরখণ্ডের উচচতা ও পরিধি ৫০ ফুটেরও অধিক। শহরে এক এক জায়গায় অনেকগুলি এইরূপ পাথর দেখিতে পাওয়া যায়। এই সকল পাথর দিয়া বহুকাল হইতে দেবমন্দির ও বাসভবন প্রভৃতি নিৰ্ম্মিত হইয়া আসিতেছে। এই পাথর গুলি সম্বন্ধে নানারূপ গল্প প্রচলিত আছে। রামচন্দ্র কুমারিকা হইতে লঙ্কা পৰ্য্যস্ত সেতু বধিবার জন্য নাকি হিমালয় হইতে পুষ্পক রথে করিয়া পাথর লইয়া যাইতেছিলেন ; দুবরাজপুরের উপর দিয়া যাইবার সময়ে রথের ঘোড়া ভয় পাইলে রথ নড়িয়া যায় ও কতকগুলি পাথর এখানে গড়িয়া যায়।