পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে リ)。 শেওড়াফুলির রাজা হরিশচন্দ্র রায় চৌধুরী কর্তৃক ইহা নিৰ্ম্মিত হয় বলিয়া প্রসিদ্ধি আছে। এই মন্দির মধ্যে বৃন্দাবনচন্দ্র, কৃষ্ণচন্দ্র, রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার দাৰুময়ী যুক্তি আছে। ইহা গুপ্তিপাড়ার গঠ নামে পরিচিত। এখানে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্র ও গৰুড়ের যুক্তি আছে। চৈতন্যদেবের মন্দিরটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নিৰ্ম্মিত হয়। ইহার আকৃতি জোড় বাংলার ন্যায়। এই মন্দিরটি সবর্বাপেক্ষা ছোট ও আড়ম্বরবিহীন। রাসযাত্রা, দোলযাত্রা ও পুনর্যাত্রার সময় গুপ্তিপাড়ায় বিশেষ সমারোহ হয় । ভাগীরথী তীরবর্তী অন্যান্য প্রাচীন স্থানের ন্যায় গুপ্তিপাড়ায়ও বহু সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের জন্ম হইয়াছিল। ইহাদের মধ্যে “শ্যামাকল্পলতিক৷ ” প্রণেতা vমথুরানাথ ভট্টাচাৰ্য্য ও “ বিদ্যোনমাদ তরঙ্গিনী " প্রণেতা vচিরঞ্জীব ভট্টাচার্য্যের নাম উল্লেখযোগ্য। আধুনিক কালের খ্যাতনামা বক্তা ও ধৰ্ম্মোপদেশক Uকৃষ্ণপ্রসন্ন সেন এখানে জন্মগ্রহণ করেন । গুপ্তিপাড়ার সন্নিকটে ভাগীরথী তীরে সুখুরিয়া গ্রামে উলার বিখ্যাত মুস্তেীকী বংশের এক শাখার বাস। ইহাদের প্রতিষ্ঠিত দেবালয়গুলিও এ অঞ্চলের দ্রষ্টব্য বস্তু। কালনা কোর্ট—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ২৬ মাইল দূর। ইহা বৰ্দ্ধমান জেলার অন্যতম মহকুমা। মুসলমান আমলে এই স্থান অতি সমৃদ্ধ ছিল। এখনও এখানে একটি পুরাতন দুর্গের পৃংসাবশেষ দেখা যায়। কালনায় বদর সাহেব ও মজলিস্ সাহেব নামক দুইজন ফকিরের সমাধি আছে। স্থানীয় লোকেরা এই সমাধি দুইটিকে বিশেষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন ও ফুল, ফল, মিষ্টান্ন ও ছোট ছোট মাটির ঘোড়ার অর্ঘ্য দান করেন। কালনায় বৰ্দ্ধমান মহারাজের গঙ্গাবাসের জন্য একটি প্রাসাদ ও ১০৯টি শিব মন্দির আছে। বর্তমানে উহাই কালনার একমাত্র দ্রষ্টব্য বস্তু। এই মন্দিরগুলি ১৮০৯ খৃষ্টাবেদ মহারাজ তেজচন্দ্র কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হয়। প্রাসাদের মধ্যে একটি শিবের, দুটি কৃষ্ণের ও আরও কয়েকটি সুন্দর কারুকার্যখচিত ইষ্টক-নিৰ্ম্মিত মন্দির আছে। রাজপ্রাসাদের পার্শ্ববর্তী সমাজ বাড়ীতে বৰ্দ্ধমান রাজপরিবারস্থ ব্যক্তিগণের চিতাভস্ম ও সমৃতিস্তম্ভ আছে। সুপ্রসিদ্ধ সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য কালনায় জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন ; তাহার রচিত সুমিষ্ট শ্যামা-সঙ্গীত রামপ্রসাদী গানের মত জনপ্রিয়। কালনার নিকটবর্তী অম্বিক গ্রাম বাঙ্গালী বৈষ্ণবগণের একটি বিখ্যাত তীর্থ। ইহা দ্বাদশ গোপালের অন্যতম গৌরীদাস পণ্ডিত ঠাকুরের শ্রীপটি। গৌরীদাস গৌরাঙ্গদেবের অতি অন্তরঙ্গ ভক্ত ছিলেন এবং মহাপ্রভুর প্রকটকালে তিনিই সবর্বপ্রথম নিম্বকাষ্ঠ নিৰ্ম্মিত গোর নিতাইএর বিগ্ৰহ প্রস্তুত করিয়া নিত্য সেবা প্রকাশ করেন। গৌরীদাসকে মহাপ্রভুর স্বহস্ত প্রদত্ত উপঢৌকন "গীতা ’ ও নৌকা বাহিবার একখানি “বৈঠা “ শ্রীপটি অম্বিকায় অতি সমাদরে রক্ষিত আছে। অম্বিকা বাজারের নিকটে “ শ্রীনাম ব্রহ্ম ' নামক অপর একটি মন্দির আছে। এই মন্দিরের প্রাঙ্গনে ভগবানদাস বাবাজী নামক এক প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব সাধুর সমাধি আছে। প্রতিবৎসর মাঘ মাসের শুরু ত্রয়োদশী তিথিতে নিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাব উপলক্ষে শ্রীপটি অম্বিকায় বৈষ্ণবগণের মহোৎসব হয়। অম্বিক গ্রামের নামোৎপত্তি সম্বন্ধে জনশ্রুতি এই, যে প্রাচীনকালে এই স্থানে অম্বরীঘ নামক জনৈক ঋষি প্রস্তর খণ্ডের উপর ঘটস্থাপনা করিয়া দেবী অম্বিকার পূজা করিতেন। দেবীর নাম