পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে כ)sס মল্লভূমে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার সম্বন্ধে একটি সুন্দর কাহিনী প্রচলিত আছে। শ্রীনিবাস আচাৰ্য্য, শ্যামানন্দ ও নরোত্তম ঠাকুর প্রভৃতি বৈষ্ণৰ মহান্তগণ বৃন্দবন হইতে গোস্বামিগণের গ্রন্থসমূহ পেটিকার মধ্যে করিয়া গো-শকটে মল্লভূমরাজ্যের মধ্য দিয়া গৌড়ে লইয়া আসিতেছিলেন। রাজ জ্যোতিষীর গণনামত পেটিকাগুলির মধ্যে ধনরত্ব আছে মনে করিয়া বীর হাম্বীর তাহার লোকজন দিয়া উহা লুন্ঠন করিয়া আনান । পুথিগুলির উদ্ধারের আশায় শ্রীনিবাস আচাৰ্য্য রাজসভায় গিয়া উপস্থিত হন। তাহার সৌম্যমূৰ্ত্তি দর্শন এবং ভগবস্তুক্তি ও অপূর্বব পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইয়। রাজা বীর হাম্বীর তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বীর হাম্বীরের বৈষ্ণব ধৰ্ম্মগ্রহণ মল্লভূমের ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়। অনেকেই বোধ হয় জানেন, কলিকাতার বাগবাজারে যে মদনমোহন ঠাকুর আছেন, তিনি বিষ্ণুপুর রাজবংশের কুলদেবতা। মল্লরাজ চৈতন্যসিংহ ইংরেজ আদালতে মোকদ্দমার খরচ সংগ্রহের জন্য এই বিগ্রহটিকে বাগবাজার নিবাসী প্রসিদ্ধ ধনী গোকুলমিত্রের নিকট বন্ধক রাখেন। বিষ্ণুপুররাজ গোপাল সিংহ নিয়ম করিয়াছিলেন যে তাহার রাজ্যবাসী প্রত্যেককেই প্রত্যহ নিদিষ্ট সংখ্যক হরিনাম জপ করিতে হইবে, ইহা যে না করিবে সে শাস্তি পাইবে। এই কাৰ্য্যকে লোকে “ গোপাল সিংহের বেগার " আখ্যা দিয়াছিল । অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে মাহারাটা বা বর্গীর উপযুঁ্যুপরি আক্রমণে ও গৃহবিবাদের ফলে মল্লরাজ্যের পতন হয়। ১৮০৬ খৃষ্টাব্দে মল্লভূম বৰ্দ্ধমানের মহারাজার নিকট বিক্রীত হয়। বিষ্ণুপুরে বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি আছে। উহাদের মধ্যে প্রাচীন দুর্গের গড়খাই, পাথর দরজা ও বীর দরজা নামক প্রস্তর নিৰ্ম্মিত দুৰ্গদ্বার, প্রসিদ্ধ “দলমৰ্দ্দন " বা “দলমাদল ” কামান, মল্লেশ্বর, মদনগোপাল, মদনমোহন, কালুচিাঁদ, শ্যামরায় ও রাধাশ্যামের মন্দির, জোড়বাংলা, রাসমঞ্চ, পঞ্চরত্ন মন্দির ; লালবাঁধ, কৃষ্ণবধ, যমুনাবাঁধ, শ্যামবাধ ও কালিন্দীবাঁধ, প্রভৃতি নামধেয় বাঁধ বা প্রকাও জলাশয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের অপূবর্ব নিদর্শন। বস্তুত: বিষ্ণুপুর প্রাচীন বঙ্গের সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি প্রধান কেন্দ্র। বিষ্ণুপুরের সুবিখ্যাত দলমাদল কামানটির দৈর্ঘ ১২ ফুট ৫ ইঞ্চি ও পরিধি ১১ ইঞ্চি। গঠনে ইহা বিজাপুরের স্বপ্রসিদ্ধ কামান “ মালিক-ই-ময়দান ” এর অনুরূপ। ইহা এরূপ লৌহের দ্বারা প্রস্তুত যে আজ পর্য্যন্ত ইহার কোথাও একটু মরিচ ধরে নাই। ইহাতে স্বতঃই দিল্লীর প্রসিদ্ধ প্রাচীন ও মরিচাবিহীন লৌহস্তম্ভের কথা মনে হয়। বৰ্ত্তমানে এই কামানটি সরকারের রক্ষিত কীৰ্ত্তির অন্তর্গত । ইহার গায়ে ফাসিতে একটি লিপি খোদিত আছে, তাহা হইতে জানা যায় যে এই কামানটি প্রস্তুত করিতে একলক্ষ পচিশ হাজার টাকা লাগিয়াছিল। প্রবাদ যে মাহারাট সর্দার ভাস্কর পণ্ডিত ১৭৪২ খষ্টাব্দে বিষ্ণুপুর আক্রমণ করিলে রাজধানী রক্ষা করিবার জন্য স্বয়ং মদনমোহন দেব দলমাদল কামান দাগিয়া শত্রুসৈন্যকে দূরীভূত করিয়াছিলেন। মদনমোহন ও জোড়বাংলা মন্দিরের গাত্রে ইষ্টকের উপর যে সকল দৃশ্যাবলী উৎকীর্ণ আছে তাহা শিল্পসম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ । জোড়বাংলার গাত্রে একটি স্বন্দর নৌ-যুদ্ধের চিত্র আছে। উহা যবীপের প্রসিদ্ধ বোরোবুদুর মন্দির গাত্রের চিত্রাবলীর কথা সমরণ করাইয়া দেয় । লালীৰ পুষ্করিণী সম্বন্ধে জনশ্রুতি এই যে, রাজা দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ বরদার বিদ্রোহী রাজা শোভা সিংহকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া নুষ্ঠিত সামগ্রীর সহিত লালবাঈ নামে একটি অতি স্থলর মুসলমান রমণীকে লইয়া আসেন। লালবাঈএর সৌন্দর্ঘ্যে আকৃষ্ট হইয়া রাজা তাহার জন্য একটি স্বতন্ত্র মহাল