পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(গ) খড়গপুর-সিনি–চক্ৰধরপুর ঝাড়গ্রাম—খড়গপুর জংশন হইতে ১৪ মাইল দুর। ইহা মেদিনীপুর জেলার অন্যতম মহকুমা। রেল লাইন খুলিবার পূর্বে এই অঞ্চল জঙ্গলাকীর্ণ ছিল এবং এখানে পাইক ও চুয়াড় প্রভৃতি দসু্যবৃত্তিধারী জাতি বাস করিত। রেলের কল্যাণে ঝাড়গ্রাম একটি সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হইয়াছে। এই স্থানে প্রাচীন মল্লভূম রাজ্যের বহু রাজবংশধরের বাস। ঝাড়গ্রামের গড়ের মধ্যে রাজবংশের অধিষ্ঠাত্রী সাবিত্রী দেবীর মন্দির আছে, ইহা একটি প্রাচীন কীৰ্ত্তি। এখানে কোন প্রতিমা নাই, সিন্দুর রঞ্জিত একখানি বৃহৎ খড়গ ও একটি পেটিকার উপর নিত্য অচৰ্চনা হয়। কথিত আছে এই পেটিকার মধ্যে এক গুচছ কেশ আছে, উহা মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী সাবিত্রী দেবীর কেশ বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই সাবিত্রী দেবী নাকি ছিলেন মানবী। প্রবাদ, জনক-জননীর সহিত ওড়িষ্যা গমন পথে ঝাড়গ্রামের নিকট তৎকালীন জনৈক দক্ষ্য কর্তৃক লুষ্ঠিত হইয়া বাল্যকাল হইতে ইনি দস্থ্য সর্দারের গৃহে লালিত পালিত হন। তিনি নিজেকে “সবিতার দাসী সাবিত্ৰী” নামে পরিচয় দিতেন। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে তাহার অপরূপ রূপলাবণ্য দর্শনে আকৃষ্ট হইয়া দস্থ্য সর্দারের পুত্র তাহাকে বলপূর্বক আয়ত্ত করিবার চেষ্টা করে, কিন্তু দৈবপ্রেরিত খড়গের সাহায্যে তিনি আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হন। সরোবর মধ্যস্থ একটি মন্দিরে তাহার বাসস্থান ছিল। ঝাড়গ্রামের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দসু্যগণের হস্ত হইতে ঝাড়গ্রাম অধিকার করিয়া লন । এই নবীন রাজাও সাবিত্রী দেবীর সৌন্দর্য্যে মোহিত হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে অভিলাষী হন। তাহার নিববন্ধতিশয়ে সাবিত্রী দেবী এই প্রস্তাবে সন্মত হন। কিন্তু বিবাহের দিন অপরাহ্নে তিনি সমস্ত অলঙ্কার ত্যাগ করিয়া একাকিনী অদূরবর্তী শালবনের দিকে চলিলেন। রাজা এই সংবাদ পাইবামাত্র অতি ব্যস্ততার সহিত র্তাহার অনুসরণ করিলেন। রাজানুস্থত সাবিত্রী দেবী শালবন পার হইয় এক বালুক প্রান্তরে পৌছিলে রাজা শশব্যস্তে তাহার দীর্ঘ কেশ গুচছ ধরিয়া ফেলিলেন। অকস্মাৎ চতুদিক হইতে বালুকারাশি আসিয়া সাবিত্রী দেবীকে ঢাকিয়া ফেলিল। রাজাও বালুকারাশির মধ্যে নিমজ্জিত হইয়া যাইতেছেন দেখিয়া অনুচরের বলপূর্বক তাহাকে সরাইয়া আনিল। সাবিত্রী দেবীর একগুচ্ছ কেশ রাজার হস্তে রহিয়া গেল। অত:পর স্বপ্লাদেশ পাইয়া রাজা সাবিত্রী দেবীর কেশ গুচছ ও খড়গ মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করিয়া নিত্য পূজার ব্যবস্থা করিলেন। ঝাড়গ্রাম গড়ের দুই মাইল দূরে রাধানগর গ্রামে ঝাড়গ্রামের অন্যতম রাজা বিক্ৰমজিৎ মল্ল উগাল দেব বাহাদুরের নিক্ষিত মেল বাঁধ ও কেরেলার বাঁধ নামে দুইটি বৃহৎ পুষ্করিণী আছে। স্বাস্থ্যপ্রদ স্থান বলিয়া ঝাড়গ্রামের বিশেষ খ্যাতি আছে। এখানকার পানীয় জল অতি মুস্বাদু এবং শালবনের হাওয়া ভগ্নস্বাস্থ্যের পুনর্গঠনে বিশেষ সহায়তা করে। ঝাড়গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী সুন্দর ও মনোরম। গিধনি—খড়গপুর জংশন হইতে ২৪ মাইল দূর। ইহাও একটি বিশেষ স্বাস্থ্যকর স্থান । গিধনি মেদিনীপুর জেলা তথা বাংলার শেষ রেলওয়ে সেটশন । কলিকাতার थानक बनी शङि এখানে বাড়ী নিৰ্মাণ করিয়াছেন। এখানে একটি ডাকবাংলা আছে। স্থানীয় অধিবাসিগণের মধ্যে সাঁওতালের সংখ্যাই অধিক। -