পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে Svć এখানে নামিয়া শ্রীহট্ট জেলার অন্যতম মহকুমা মৌলবীবাজার যাইতে হয়। স্টেশনে মোটর ও ঘোড়ার গাড়ী পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল স্টেশন হইতে মৌলবীবাজার ১৪ মাইল পথ । মৌলবীবাজারের নিকটে ঘাড়ের গজ বা লংলার পাহাড় নামে একটি পাহাড় এবং হাইল হাওর নামে একটি প্রকাণ্ড হ্রদ আছে। পাহাড়ের আকৃতি বৃষের কর্কুদের মত বলিয়া “ম্বাড়ের গজ ’ নাম হইয়াছে। ইহা উচচতায় ১১০০ ফুট। ভানুগাছ—আখাউড়া জংশন হইতে ৬২ মাইল। পূবেৰ্ব ইহার নিকটবৰ্ত্তী অঞ্চল ইটা নামক একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। পশ্চিমদেশ হইতে আগত নিধিপতি নামক এক ব্যক্তি এই রাজ্যের স্থাপয়িতা বলিয়া কথিত। নিধিপতি “ ভূমিউড়া-এও-লাতলি ’ গ্রামে তাহার রাজধানী স্থাপন করিয়াছিলেন। তাহার “সপ্তপার দীঘি ’ এখনও তথায় বৰ্ত্তমান। কিংবদন্তী নিধিপতি পশ্চিমের ইটোয়া বা ইট হইতে আসিয়াছিলেন বলিয়া রাজ্যের নাম ইট রাখেন। এই বংশে শুভরাজ খাঁ ইরাণী ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন এবং দীঘি খনন প্রভূতি নানা লোকহিতকর কাজ করিয়াছিলেন বলিয়া দিল্লীর সম্রাটের নিকট হইতে খাঁ উপাধি লাভ করেন। তিনি ভানুগাছ হইতে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে বর্তমান পাচগাঁওএর দক্ষিণে ও এওলাতলির পূবর্বদিকে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। সেই স্থান এখনও রাজখলা বলিয়া পরিচিত এবং তথায় শুভরাজ খা বা সুরাজ খাঁর দীঘি নামে খ্যাত তাহার প্রতিষ্ঠিত দীঘি এখনও বর্তমান। শুভরাজ খাঁর পুত্র ভানুনারায়ণ বল বিক্রমে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন সামন্তরাজা চন্দ্ৰসিংহ বিদ্রোহী হইলে ভানুনারায়ণ র্তাহাকে যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া বন্দী অবস্থায় ত্রিপুরাধিপতির নিকট অর্পণ করেন। মহারাজা সন্তুষ্ট হইয় ভানুনারায়ণকে রাজা উপাধিতে ভুষিত করেন এবং চন্দ্রসিংহের অধিকৃত ভূমির কিছু অংশ তাঁহাকে অর্পণ করেন। এই ভূমিখণ্ড তাঁহারই নামানুসারে ভানুকচছ বা ভানুকাছ ও অধুনা ভানুগাছ নামে পরিচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে ভানুনারায়ণই ইটার প্রথম রাজা । তিনি এওলাতলি ও পাচগাঁওএর ৪/৫ মাইল দক্ষিণে রাজনগর নামে নূতন রাজধানী স্থাপন করেন। ভানুনারায়ণের পুত্র রাজা স্ববিদনারায়ণ প্রভাব প্রতিপত্তিশালী শাসক ছিলেন। রাজনগরে তাহার প্রতিষ্ঠিত “সাগর দীঘির ” মত বড় দীঘি শ্রীহট্ট জেলায় বেশী নাই। সুবিদনারায়ণের প্রথম কন্যা রত্নাবতী খঞ্জা ছিলেন। তাহার সহিত প্রসিদ্ধ পণ্ডিত গোবিন্দ চক্ৰবৰ্ত্তীর জ্যেষ্ঠ পুত্র রঘুপতির বিবাহ হয়। এই বিবাহে রঘুপতির মাতার অমত থাকায় তিনি কনিষ্ঠ পুত্র বালক রঘুনাথকে লইয়া নবদ্বীপ চলিয়া যান। অনেকে বলিয়া থাকেন এই রঘুনাথই নবদ্বীপের বিখ্যাত পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণি। রাজা সুবিদনারায়ণের সহিত শ্রীহট্টের দেওয়ান আনন্দ নারায়ণের মনোমালিন্য ঘটে এবং তাহার প্ররোচনায় দিল্লীশ্বরের আজ্ঞায় খোয়াজ ওসমান রাজনগর আক্রমণ করেন। শত্ৰ পক্ষ রাজবাটি অবরোধ করে। ভীষণ যুদ্ধে সুবিদনারায়ণ বীরের ন্যায় নিহত হন। রাণী কমলাসুন্দরী সহমরণে যান এবং কনিষ্ঠ রাজকুমারী ভানুমতী বিষপান করিয়া মৃত্যুকে বরণ করেন। রাজপুত্রগণ ধৃত হইয়া দিল্লীতে প্রেরিত হন। তথায় তাহারা ইসলাম ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন এবং খাঁ উপাধি প্রাপ্ত হন। তাহারা ইটায় প্রত্যাগমন করিয়া পিতৃ সম্পত্তির বহু অংশ ফিরাইয়া পান। টিলাগাও—আখাউড় জংশন হইতে ৭২ মাইল দুর। টলগাঁও হইতে প্রায় ১০ মাইল দক্ষিণ-পূর্ব কোণে শ্রীহট্ট জেলার সীমানার বাহিরে পাবর্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যে উনকোটি তীর্থ