পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ む) রথুরামপুরের পশ্চিমে সুখবাসপুর গ্রামের দীঘির ধারে রাজা রঘুরায়ের একটি প্রমোদ ভবন ছিল বলিয়া গ্রামটির নাম মুখবাসপুর হয় বলিয়া কথিত। এই গ্রামে একটি সুন্দর তারা মুক্তি পাওয়া গিয়াছিল। মুন্সীগঞ্জ হইতে ৬ মাইল দক্ষিণে সেরাজাবাদ গ্রামে বিক্রমপুরের বাউল সম্প্রদায়ের প্রবর্তক সুধারাম বাউলের আখড়া অবস্থিত। তাঁহার রচিত বহু বাউল সঙ্গীত এ অঞ্চলে চলিত আছে। সেরাজাবাদ হইতে প্রায় ৩ মাইল আরও দক্ষিণে কামারখাড়া গ্রামের উচচ মঠটি এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ; এই গ্রামে একটি দীঘির সংস্কারকালে লন্ধ অতি সুন্দর রজত-নিৰ্ম্মিত শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারী একটি চতুৰ্ভুজ ত্রিবিক্রম মুক্তি প্রতিষ্ঠিত আছেন। পদ্মের উপর দণ্ডায়মান মুক্তিটি সবৰ্বশুদ্ধ ১৪ ইঞ্চি । দুই পাশ্বে রজত নিৰ্ম্মিত লক্ষী ও সরস্বতী মুক্তি ; পাদদেশে অষ্টধাতুর গরুড় ও উপরে অষ্টধাতুর চাল বিদ্যমান বিগ্রহটি সম্বন্ধে নানারূপ অলৌকিক ঘটনার কাহিনী প্রচলিত আছে। "ހ প ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ হইতে ১০ মাইল দূর। বুড়ী-গঙ্গা নদীর উত্তরকুলে অবস্থিত ঢাকা একটি প্রাচীন নগরী। গোয়ালন্দ-নারায়ণগঞ্জ সীমার পথ ব্যতীত কলিকাতা হইতে সিরাজগঞ্জ ঘাট ট্রেণে, তথা হইতে জগন্নাথগঞ্জ স্টীমারে ও জগন্নাথগঞ্জ হইতে ট্রেণে কিংবা তিস্তামুখ ঘাট পৰ্য্যস্ত ট্রেণে, তথা হইতে বাহাদুরাবাদ সীমারে এবং বাহাদুরাবাদ হইতে ঢাকা পৰ্য্যস্ত ট্রেণে আসা যায়। খৃষ্টীয় ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় পৰ্য্যটকগণ বেঙ্গালা নামে একটি বদ্ধিষ্ণু নগরীর উল্লেখ করিয়াছেন, বাহারও কাহারও মতে ঢাকা ও বেঙ্গালা একই শহর। সম্রাটু জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সুবাদার ইসলাম খাঁ কর্তৃক ১৬০৮ খৃষ্টাব্দে বাংলার রাজধানী রাজমহল হইতে ঢাকায় স্থানান্তরিত করিবার পূর্ব ফুতেই যে ঢাকা নগরীর প্রাধান্য ছিল তাহাতে সন্দেহ নাই। ইহার পূবেৰ্ব মহারাজ মানসিংহ এখানে কিছুকাল অবস্থান করিয়াছিলেন। ইসলাম খাঁ আসিবার বহু পূবেৰ্ব এই স্থানে দুইটি প্রাচীন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী বসাকগণ বাণিজ্য উপলক্ষে এইস্থানে আসিয়া বাস করিতে থাকেন। রাজধানী স্থানাস্তরের কারণ ছিল রাজমহলের নিকট গঙ্গার গতি পরিবর্তনে ব্যবসায়ের অসুবিধা ও পর্তুগীজ, মগ ও আহোমদের আক্রমণ হইতে বাংলার পূর্বপ্রান্ত রক্ষার সুব্যবস্থা করা। সম্রাটের নাম অনুসারে রাজধানী ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত হয়। ইসলাম খাঁর নাম হইতে ঢাকা শহরের নবাবপুর ও ইসলামপুর মহাল্লার নাম হইয়াছে। >Wり>○ খৃষ্টাব্দে ঢাকায় তাহার মৃত্যু হইলে তাঁহার মৃতদেহ তাঁহার জন্মস্থান ফতেপুর-শিকৃরীতে লইয়৷ নিয়া সমাহিত করা হয়। তাহার পর তাহার ভ্রাত কাশিম খাঁ কয়েক বৎসর সুবাদার ছিলেন এবং ১৬১৮ খৃষ্টাব্দে সম্রাজ্ঞী নূর জাহানের ভ্রাতা ইব্রাহিম বা ফতেজঙ্গ কাশিমের পরিবর্তে মুবাদার নিযুক্ত হন। পাঁচ বৎসর শাস্তিতে শাসন করিবার পক্ষ বিদ্রোহী রাজকুমার শাহজাহানের সহিত যুদ্ধে তিনি নিহত হন ; শাহজাহান অল্পকালের জন্য ঢাকায় বাস করিয়াছিলেন। শাহজাহান বাংলা ত্যাগ করিলে পর পর কয়েকজন সুবাদারের পর ১৬৩৮ খৃষ্টাব্দে ইসলাম খাঁ মশদী সুবাদার নিযুক্ত হন। ইনি চট্টগ্রাম অধিকার করিয়া উহার নাম ইসলামাবাদ রাখেন। পর বৎসর ১৬৩৯ খৃষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান ইসলাম খাকে দিল্লীতে উজির পদে নিযুক্ত করেন এবং পুত্র শাহ শুজাকে বাংলার মুবাদার করিয়া প্রেরণ করেন। শাহ শুজা ঐ বৎসরই রাজধানী পুনরায় রাজমহলে লইয়া যান। কুড়ি বৎসর দক্ষতার সহিত শাসন করিবার পর পিতার কঠিন পীড়া হইলে সিংহাসন লইয়া ভ্রাতৃবিরোধ উপস্থিত হয় ও ভ্রাতা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা কর্তৃক শাহ শুজা পরাজিত হইয়া