পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬০ বাংলায় ভ্রমণ এই স্থান সংস্কৃত চর্চার একটি বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। স্বনামখ্যাত বৈষ্ণব পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় বিশ্বনাথ চক্রবত্তী দেবগ্রামের অধিবাসী ছিলেন। খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে তাঙ্গার জন্ম হয়। তিনি যেরূপ ভক্ত তেমনই পণ্ডিত ছিলেন। আওরঙ্গজেবের সময়ে মথুরা ও বৃন্দাবন বিধ্বস্ত হইবার পর বিশ্বনাথের চেষ্টায় ও দিল্লীশ্বর মহম্মদ শাহের সেনাপতি জয়পুররাজ দ্বিতীয় জয়সিংহের সাহায্যে উক্ত তীর্থদ্বয়ের লুপ্তগৌরবের পুনরুদ্ধার হয়। জয়সিংহ বিশ্বনাথের প্রতিভা দর্শনে মুগ্ধ হইয়া শিষ্যের ন্যায় তাহার আনুগতা স্বীকার করেন। প্রায় একশত বৎসর বয়সে বৃন্দাবনে বিশ্বনাথের লোকান্তর ঘটে । বৈষ্ণব সমাজে বিশ্বনাথ কৃত টীকা ও মৌলিক গ্রন্থগুলি বিশেষ আদরের সহিত পঠিত হয়। র্তাহার “সারার্থ দর্শনী” নামে ভাগবতের টীকা “সারার্থ বর্ষিণী” নামে ভগবদগীতার টীকা, “সুবোধিনী” নামে অলঙ্কারকৌস্তুভের টীকা ও তৎ প্রণীত মৌলিক সংস্কৃত গ্রন্থ “শ্ৰীকৃষ্ণভাবনামৃত” “চমৎকার চন্দ্রিক,” “প্রেম সম্পূট” “ব্রজরীতি চিন্তামণি” প্রভৃতি র্তাহার অপূর্ব প্রতিভা, পাণ্ডিত্য ও ভক্তির পরিচায়ক। তিনি চব্বিশখানি টীকা ও মৌলিক গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। ইহা ছাড়া তিনি হরিবল্লভ বা বল্লভ এই ভনিত দিয়া অনেক সুন্দর পদাবলীও রচনা করিয়াছিলেন। বৃন্দাবনধামে বিশ্বনাথের এতদূর প্রভাব ছিল, যে অনেকে র্তাহাকে সুবিখ্যাত রূপ গোস্বামীর অবতার বলিয়া মনে করিতেন। তৎকালে বৈষ্ণবপ্রধানগণ কর্তৃক তাহার নামের এইরূপ একটি ব্যাখ্যা প্রচারিত হইয়াছিল ;– “বিশ্বস্ত্য নাথরূপোহসে ভক্তিবত্ত্ব প্রদর্শনাং । ভক্তচক্রে বর্তিতত্বাং চক্রবর্ত্যাখ্যায়াভবৎ ॥” “সকলকে মহাদেবের ন্যায় ভক্তির পথ দেখাইয়াছিলেন বলিয়া ইহার নাম বিশ্বনাথ এবং ভক্তমণ্ডলীর শীর্ষস্থান অধিকার করায় ইনি চক্রবর্তী।” পলাশী—কলিকাতা হইতে ৯৩ মাইল দূর। এ লাইনে ইহাই নদীয়া জেলার শেষ স্টেশন। স্টেশন হইতে প্রায় তুষ্ট মাইল পশ্চিমে ইতিহাস-বিশ্রুত পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্র অবস্থিত। কথিত আছে, পূর্বে এই অঞ্চলে বহু পলাশ বৃক্ষ থাকায় এই স্থানের নাম হয় পলাশী, কিন্তু বহুকাল হইতে ইহাদের কোন চিহ্নই নাই। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ২৩এ জুন বৃহস্পতিবার এই স্থানে বাংলার শেষ স্বাধীন নৃপতি নবাব সিরাজদ্দৌলার সেনাবাহিনীর সহিত ক্লাইভের অধিনায়কতায় ইংরেজ সৈন্তের যে যুদ্ধ হয়, তাহাতে জয়লাভ করিয়া ইংরেজ কাৰ্য্যতঃ বাংলার আধিপত্য লাভ করেন । মীরজাফর ও তুর্লভরামের অধীনে নবাবের প্রায় ৪৫,০০০ সৈন্য ছিল। কিন্তু ইহার গোপনে ইংরেজ পক্ষ গ্রহণ করায় যুদ্ধকালে নিশ্চেষ্টভাবে দাড়াইয়া থাকেন। ইহার ফলে মুষ্টিমেয় ইংরেজ সৈন্য কর্তৃক নবাবের বিপুল বাহিনী পরাজিত হয়। পলাশী-প্রান্তরবাহিনী ভাগীরথীর তটে একটি ঘন সন্নিবিষ্ট আম্রকুঞ্জের মধ্যে ক্লাইভ শিবির সন্নিবেশ করেন। ইহার অদূরে ভাগীরথীর দুইটি বড় বাকের সম্মুখভাগে নবাব বাহিনী অবস্থান করিতে থাকে। নবাব পক্ষীয় সিনফ্রে বা সেন্ট ফ্রায়াস নামে একজন ফরাসী সেনাপতির অধীন গোলন্দাজ সৈন্য ইংরেজ শিবির লক্ষ্য করিয়া সৰ্ব্বপ্রথম গোলাবৃষ্টি করিতে আরম্ভ করে। সিনফ্রের পশ্চাতে যথাক্রমে সিরাজের বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন বা মীর মর্দান এবং রাজা