পাতা:বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা و 8 এই কারণেই বোধ হয় এইসব গানের বৈষ্ণব-পদাবলী বলে খ্যাতি । নতুবা দেখা যায়, পদকর্তাদের অধিকাংশই শাক্তধর্মাবলম্বী । অন্তত চণ্ডীদাস বিদ্যাপতি তো বটেনই। তবে, কাব্যে শাক্ত বৈষ্ণব বলে তো কিছুই নেই। একটা লেবেল এটে কবিতার আখ্যা-ব্যাখ্যা দিতে যাওয়াটা অত্যন্ত মূঢ়তার কাজ। আর তা যদি নাই হত, তা হলে ইয়রোপীয়ন ক্রীশ্চানদের লেখা কাব্য আমাদের তো একেবারেই ভালে৷ লাগত না । আমরা বিধর্মীর রচনা বলে তাকে দূরেই ঠেলে রাখতুম। ধর্মসাধনার অঙ্গরূপে ব্যবহার হয়েছিল বলেই এইসব কবিতারও একটা আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দেওয়াট অনিবার্য হয়ে পড়েছিল । এরকম শুধু এদেশে নয়, অন্যান্য দেশেও অনেক ঘটেছে, দেখা যায়। ইহুদীদের রচিত খ্ৰীস্টানদের মাননীয় বাইবেলের পুরোনো অংশে রাজা সলোমনের লেখা বলে প্রসিদ্ধ The Song of Solomon নামে এক অতি অপূর্ব প্রেমসংগীত আছে । এই গানের একটা লাইন এইরকম : A bunch of myrrh is my well-beloved unto me 5. he shall lie all night betwixt my breasts. ধর্মপুস্তকে লেখা আছে বলে ধর্মযাজকদের কৃপায় এই ব্রেস্টুস আর ব্রেস্টুস রইল না। গির্জের দু-দুটো চুড়ে বলেই তাদের ব্যাখ্যা চলে গেল । পদাবলীরও একটা আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দেওয়া রীতি হয়ে দাড়ালেও, এটা তাদের আসল ব্যাখ্যা নয়। কাব্যরস অনির্বচনীয়। আখ্যা-ব্যাখ্যা দিয়ে তার কুল-কিনারা পাওয়া শক্ত। পদ্য হয় কবিতা হল, না হয় হল না। যেটা কবিতা হল, সেটা নিয়ে নানাপ্রকার টীকা-টিপ্পনী করা যদিও মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক, তবু তার স্বরূপ শুধু কথা দিয়ে বোঝানো অসম্ভব ।