“অরূপ বীণা রূপের আড়ালে”
বীণা দেখা যায় কিন্তু সুর তাকে দেখা যায় না; কিন্তু চেনা যায় সেই সুর দিয়ে যে এটি বীণা বাজছে, ঢাক নয় ঢোল নয় গ্রামেফোনের বীণা নয়। দেখা বীণার সঙ্গে না-দেখা যে সুরটি জড়িয়ে রয়েছে, সেটি বীণার প্রাণস্বরূপ, বীণার কাঠামো ধরে’ আছে প্রাণ।
“রূপের পাথরে আঁখি ডুবিয়া রহিল,
যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল।”
একটি রূপের অশেষ প্রকাশ, দৃষ্টি খুঁজে খুঁজে রূপ-সাগরের পায়ে অরূপ বলে একটা কিছু ধরতে সাঁতরে চল্লো না, রূপের মধ্যেই তলিয়ে গেল। মন যৌবনের শেষ চাইলে না, নতুন থেকে নতুনতর আনন্দে আপনাকে হারিয়ে ফেলেই চল্লো। এই হ’ল রূপদক্ষের কথা, রূপ-সাধনের চরম সিদ্ধি। এক সঙ্গে রূপ-লাবণ্য ভাবভঙ্গি যা চোখে দেখা গেল তা এবং সেই সঙ্গে রূপের মাধুরী তাও পেয়ে গেল যখন মানুষ, তখন সে হ’ল রূপদক্ষ।
রূপ সবারই চোখে পড়ে কিন্তু রূপের মাধুরী তো সবার কাছে ধরা দেয় না। ফুলটা দেখলাম, ফুলের আভ্রাণ নিয়ে ফুলের সৌরভ কেমন তাও জানলাম, কিন্তু এই হ’লেই যে ফুলের মাধুরীটিও পেয়ে গেলাম এমন নয়।
রূপের মধ্যে তিনটি জিনিয—একটি তার আকার প্রকার, একটি তার অন্তর্নিহিত ভাব আর এই দুই জড়িয়ে যে মাধুরী ফুটলো সেটি। পর্বত যে পর্বত এবং সে যে বিরাট ভাব নিয়ে বিরাট, এটুকু সাধারণের পক্ষে ধরা শক্ত নয়, কিন্তু পর্বতের নবীন নীরদ শ্যামরূপের মাধুরী সবার ধারণার বিষয় তো হয় না। তেমনি একটা কবিতা ছবি গান এরা যা দেখালে তা পেলেম, অথচ এদের মাধুরী মনকে একেবারেই স্পর্শ করলে না এমন ঘটনা সাধারণ। রূপদক্ষ যাঁরা তাঁরা এই মাধুরীকে পেয়ে যান, তাই সব রূপই তাঁদের কাছে কালে কালে পুরাতন হ’য়ে যায় না, কোন কালে এই আকাশ-পর্বত নদ-নদী জল-স্থল এরা