পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

র্তাহারই সময়ে বর্তমান ছিলেন ; উীহার জন্মশক ১৩২০ । ইংরাজী ১৩৯৯ সালের পুরাতন পাঁজির ১২ই জানুয়ারি। কৃত্তিবাসের কবিতা শুনিয়া— “সন্তুষ্ট হইয় রাজা দিলেন সন্তোষ । রামায়ণ রচিতে করিলা অনুরোধ ॥” এইরূপে গৌড়েশ্বর কতৃক আদিষ্ট হইয়া কৃত্তিবাস বাল্মীকি রামায়ণের বঙ্গানুবাদে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি সর্বদা মূলের অনুসরণ করেন নাই ; তাহার গ্রন্থে এমন ঘটনার বর্ণনা রহিয়াছে যাহা মূলে নাই। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যাইতে পারে যে কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন যে রাম-জন্মের “ষাটি হাজার বৎসর” পূৰ্ব্বে বাল্মীকি রামায়ণ লিখিয়াছেন। রাবণবধ প্রসঙ্গে লিখিয়াছেন যে ব্রহ্মা রাবণের মৃত্যুবাণ তাহারই হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন, একথা বাল্মীকি উল্লেখ করিয়াছেন। হনুমান কতৃক গন্ধমাদন পর্বত ও বিশল্যকরণী ঔষধ আনয়ন কোনও রামায়ণেই নাই, কিন্তু কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন যে তিনি প্রাচীন রামায়ণ হইতেই ইহ সংগ্ৰহ করিয়াছেন। ইহা ছাড়াও মহীরাবণ, অহীরাবণ, হনুমানের স্বর্যকে বন্দী করা প্রভৃতি আরও ছোট খাট অনেক বিষয় কৃত্তিবাসের গ্রন্থে নূতন দেখা যায় । কিন্তু এই সকল বিষয় যে কৃত্তিবাসেরই রচনা, একথা জোর করিয়া বলা যায় না । আমরা কৃত্তিবাসী রামায়ণের একটি সংশোধিত এবং পরিবর্ধিত রূপ পাইতেছি । ইহাতে অন্য কবির রচনাও নির্বিবাদে কৃত্তিবাসের নামে প্রচারিত হইয়াছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমরা ‘অঙ্গদ রায়বার’এর উল্লেখ করিতে পারি। কুক্তিবাসের গ্রন্থে এই পালাটি যে আকারে আছে তাহী কবিচন্দ্র নামক এক পরবর্তী কবির লিখিত। কৃত্তিবাসের কাব্য সর্ববাদীসম্মতভাবে শ্রেষ্ঠ বলিয়া বিবেচিত হওয়াও পরবর্তী লেখকদের রামায়ণ হইতে র্তাহীদের শ্রেষ্ঠাংশগুলিও কৃত্তিবাস রচিত মনে করিয়া তাহারই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট করা হইয়াছে। কিন্তু ইহা দ্বারা কৃত্তিবাসের গৌরবের কোনও হ্রাস হয় নাই। সকল দিক হইতেই তাহার রচন। সার্থক হইয়াছে। তিনি রামায়ণকে সম্পূর্ণরূপে বাঙালীর নিজস্ব করিয়া স্বষ্টি করিয়া ইহাকে জাতীয় মহাকাব্যের স্থানে উন্নীত করিয়াছেন । তাহার সফলতায় অনুপ্রাণিত হইয় বহু কবি পরবর্তীকালে রামায়ণ রচনা করিয়াছেন বটে, কিন্তু কেহই এই আদি কবির যশ ও গৌরব নষ্ট করিতে পারেন নাই । রামায়ণ-রচনার ফলে কৃত্তিবাসের যশ চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ায় অনেক যশঃপ্রার্থী কবি রামায়ণ রচনায় মন দিয়াছিলেন । এই সকল রামায়ণকারদের Woo.