পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৯৯

করিয়াছিলেন। তিনি পাল-কুলসমুদ্রোত্থিত শীতকিরণ চন্দ্ররূপে প্রতিভাত এবং সাম্রাজ্যলাভে খ্যাতিভাজন হইয়াছিলেন। রামচন্দ্র যেমন অর্ণব লঙ্ঘন করিয়া, রাবণবধান্তে জনক-নন্দিনী লাভ করিয়াছিলেন, রামপালদেবও সেইরূপ যুদ্ধার্ণব সমুত্তীর্ণ হইয়া ভীম নামক ক্ষৌণীনায়কের বধসাধন করিয়া জনকভূমি বরেন্দ্রীলাভে ত্রিজগতে আত্মযশঃ বিস্তৃত করিয়াছিলেন[১]। সম্ভবতঃ সন্ধ্যাকরনন্দী স্বয়ং ‘রামচরিতের’ টীকা রচনা করিয়াছিলেন; কারণ, অপরের পক্ষে এই টীকা রচনা অসম্ভব। শ্লোক মধ্যে একটি শব্দ দ্বারা যে সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা গ্রন্থকার ব্যতীত অপরের নিকটে দুর্ব্বোধ্য। সন্ধ্যাকরনন্দী পৌণ্ড্রবর্দ্ধনপুরের অধিবাসী ছিলেন[২]। তাঁহার পিতা প্রজাপতিনন্দী রামপালের মহাসান্ধিবিগ্রহিক ছিলেন[৩]; সুতরাং সন্ধ্যাকরনন্দী রামপালের রাজ্যকালের ঘটনাসমূহ যতদূর পর্য্যন্ত অবগত ছিলেন, তাহা অপরের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

 রামপালের রাজধানী রামাবতী নগরীর ধ্বংসাবশেষ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় শব্দগত সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করিয়া ঢাকা জেলার অন্তর্গত রামপালকে রামাবতী বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন[৪]। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বগুড়া জেলায়

  1. তেনে যেন জগৎত্রয়ে জনকভূলাভাদ্‌যথাবদ্যশঃ
    ক্ষৌণীনায়কভীমরাবণবধাদ্‌যুদ্ধার্ণ্ণবোল্লংঘনাৎ॥ ৪
    —গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১২৯।

  2. বসুধাশিরোবরেন্দ্রীমণ্ডলচূড়ামণিঃ কুলস্থানং।
    শ্রীপৌণ্ড্রবর্দ্ধনপুরপ্রতিবদ্ধঃ পুণ্যভূঃ বৃহদ্বটুঃ॥
    —রামচরিত, কবিপ্রশস্তি, ১।

  3. রামচরিত, কবি প্রশস্তি, ১৩।
  4. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 14.