পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
৪১

অধিপতি চন্দ্রবর্ম্মা সপ্তসিন্ধুর মুখ ও বাহ্লীক দেশ হইতে বঙ্গদেশ পর্য্যন্ত সমস্ত আর্য্যাবর্ত্ত জয় করিয়াছিলেন। বঙ্গদেশে বাঁকুড়া জেলায়, শুশুনিয়া পর্ব্বতগাত্রে চন্দ্রবর্ম্মার যে শিলালিপি আছে, তাহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, তাঁহার পিতার নাম সিংহবর্ম্মা এবং তিনি চক্রস্বামী বা বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন[১]। পুরাতন দিল্লীর ধ্বংসাবশেষ মধ্যে কুতুবমিনারের নিকটে মসজিদ্ কুতুব-উল-ইসলামের অঙ্গণে একটি বৃহৎ লৌহস্তম্ভ আছে। ইহার গাত্রে যে প্রাচীন খোদিতলিপি আছে, তাহা হইতে জানিতে পারা যায় যে, চন্দ্র নামে জনৈক রাজা বিষ্ণুপাদগিরিতে বিষ্ণুর ধ্বজ স্থাপন করিয়াছিলেন এবং বঙ্গে সিন্ধুর সপ্ত মুখের পারে ও বাহ্লীক দেশে যুদ্ধে জয়লাভ করিয়াছিলেন[২]। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মালবদেশে, প্রাচীন দশপুরের (বর্ত্তমান মন্দশোর) ধ্বংসাবশেষ মধ্যে একখানি শিলালিপি আবিষ্কার করিয়াছেন। তাহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, চন্দ্রবর্ম্মার ভ্রাতার নাম নরবর্ম্মা এবং তিনি ৪৬১ বিক্রমাব্দে (৪০৪-৫ খৃষ্টাব্দে) জীবিত ছিলেন[৩]। এই সকল প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া, শাস্ত্রীমহাশয় নির্ণয় করিয়াছেন যে, শুশুনিয়া পর্ব্বতলিপির চন্দ্রবর্ম্মা ও দিল্লীর লৌহস্তম্ভলিপির চন্দ্র একই ব্যক্তি; এবং দশপুর বা মন্দশোরের শিলালিপির নরবর্ম্মা তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। চন্দ্রবর্ম্মা সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয় যাত্রার অব্যবহিত পূর্ব্বে, বঙ্গদেশ হইতে বাহ্লীকদেশ পর্য্যন্ত সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত জয় করিয়াছিলেন। এলাহাবাদের দুর্গমধ্যে, অশোকের শিলাস্তম্ভে সমুদ্রগুপ্তের যে প্রশস্তি উৎকীর্ণ আছে, তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায়

  1. প্রবাসী, ১৩২০, পৃঃ ৪৯৭
  2. Fleet's Corpus Inscriptionum indicarum, Vol. III, p. 141.
  3. Indian Antiquary, 1913, pp. 217-19.