পাতা:বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র - মহেন্দ্রনাথ গুহ.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র
৪২

হইলেন এবং দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করিতে সমর্থ হইলেন। তিনি দেখিতে পাইলেন, যে শক্তিতে শক্তিমান হইয়া একদিন তিনি কর্ম্মক্ষেত্রে বিচরণ করিতেছিলেন, দেশবন্ধুর মহাপ্রয়াণে তাঁহার সেই শক্তি মন্দীভূত হইয়া আসিতেছে। কিন্তু মুহূর্ত্তের এই দুর্ব্বলতা শীঘ্রই দূর হইল। এতদিন তিনি সংসারের ঘোর আবর্ত্তনে পতিত হইয়া যে শক্তি সঞ্চয় করিয়াছিলেন, তাহার প্রভাব এখন বুঝিতে পারিলেন। ধনীর সন্তান হইয়াও তিনি কিশোর বয়স হইতেই দুঃখকে বরণ করিয়া লইয়াছিলেন। জন্মভূমির দুঃখ দারিদ্র্য দূর করিবার জন্য, আর্ত্তের সেবা করিবার জন্য অনশন, অর্দ্ধাশন এবং অনিদ্রা তাঁহার চিরসাথী হইয়াছিল। পথশ্রমে তিনি কোনও দিনই ক্লান্তি অনুভব করেন নাই। দিনের পর দিন পদব্রজে ভ্রমণ করিয়া তিনি বিপদসঙ্কুল দীর্ঘপথ অতিক্রম করিয়াছেন। তথাপি তিনি স্বদেশ সেবায় বিরত হন নাই। সুতরাং আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হইয়া দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত তিনি কর্ম্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইলেন।

 মনেরভাব ভাষায় ফুটাইয়া তুলিবার ক্ষমতা তাঁহার কিরূপ অসাধারণ ছিল, কলিকাতা কংগ্রেসের অধিবেশনে অনেকেই তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন। কংগ্রেস স্বরাজের প্রার্থী ছিলেন বটে, কিন্তু স্বরাজের প্রকৃত অর্থ কি এতদিন কেহই তাহা স্থির করিতে পারেন নাই। কলিকাতা কংগ্রেসের অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রই প্রথম বুঝাইয়া দিলেন যে “স্বরাজের” অর্থ “স্বাধীনতা” এবং কংগ্রেসকে এই অর্থ গ্রহণ করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন।