পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিক্রমপুর।
[ ৩য়, বর্ষ ১ম সংখ্য

এখনও অগ্রগণ্য। বিক্রমপুরের অধিবাসীরা অতিথিপরায়ণতার জন্য বঙ্গদেশের সর্ব্বত্র বিখ্যাত। সে দেশে মুষ্টি ভিক্ষা সংগ্রহ কঠিন কার্য্য নহে, প্রতি গ্রামে মাসে যদি দুইবার করিয়া মুষ্টিভিক্ষা সংগ্রহের ব্যবস্থা হয়, তাহা হইলে অর্থ সংগ্রহের যে বিশেষ কষ্ট হয় তাহা নহে। মানুষ যদি হৃদয়ের হেয় প্রবৃত্তিগুলির অধীন না হয়, সৎকার্য্যকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ত্তব্য বলিয়া মনে করে তাহা হইলে সে জীবনকে কত মধুর করিয়া তুলিতে পারে।

 ‘আমাদের দেশে বহু সংখ্যক লোক এক বেলাও পেট ভরিয়া খাইতে পায় না, ছিন্ন মলিন বস্ত্র খণ্ডে কোন প্রকারে লজ্জা রক্ষা করে, এবং গৃহহীন বা প্রায় গৃহহীন অবস্থায় কালযাপন করে।’* একথা কয়টা অতি সত্য। বর্ষাকাল, ঝম্ ঝম্ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে, চালের খড় ঝড়ে উড়িয়া গিয়াছে, এক মেজে জলের মধ্যে হয়ত স্বামী স্ত্রী অনাহারে শিশু পুত্রটীকে বুকে করিয়া অশ্রু জলে ভাসিতেছে। গ্রাম্য লোক কেহ হয়ত সহানুভূতি প্রকাশ করিল, কেহ হয়ত করিল না। দরিদ্রের অবস্থার উন্নতির জন্য সমাজ কি কিছু করিতে পারে না? কি করিতে পারে তাহাই বিবেচ্য। মাড়োয়ারী ও পার্শীদের মধ্যে এ বিষয়ে বেশ দৃষ্টি আছে। দেশ হইতে যদি কোনও নিঃসম্বল মাছোয়ারী কোনও সহরে আইসে তাহা হইলে প্রত্যেক মাড়োয়ারী তাহাকে নিজ নিজ দোকান হইতে এক এক যোড়া কাপড় দিয়া ব্যবসা করিবার জন্য সহায়তা করে; ঐরূপ সাহায্য পাইয়া দে অল্প সময়ের মধ্যেই অতি সহজে ব্যবসায়ে উন্নতিলাভ করে। পার্সী সমাজের মধ্যেও এইরূপ রীতি আছে; তাহার। সমাজের কেহ দরিদ্র হইলে একটা টাকাও একখানা ইট পাঠাইয়া দেয়। অতি বড় যে ধনী সেও ঐ নিয়মের ব্যতিক্রম করে না। আমাদের গ্রাম্য সমাজে এইরূপ রীতি সহজেই অনুসৃত হইতে পারে; ইহা দ্বারা অতি সহজেই মূলধন সংগৃহীত হয়। গ্রামে ছোট কাজ বা ছোট খাটো ব্যবসাবলম্বন করিতে খুব বেশী অর্থেরও ত প্রয়োজন হয় না।

 ভূদেব বাবুর মত ‘যেন আমি অনুমাত্রও দেশের কাজে লাগিতে পারি’ এ বিশ্বাস যদি প্রত্যেক গ্রাম্য যুবক, বৃদ্ধ ও শিক্ষিত ব্যক্তির থাকে তাহা হইলে দেশের অনেক কাজই অতি সহজে নিষ্পন্ন হইতে পারে।

* প্রবাসী ফাঙ্গুন, ১৩২১।