পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৬১

কিন্তু তাঁকে দেখে মন খুসি হোলো এই জন্যে যে তিনি বাঙালি মেয়ে অর্থাৎ এক মুহূর্ত্তে অনেকখানি জানা গেল—তাঁর সরযু নাম বিয়াট্রীস্‌ বা এলিয়োনোবার মতো পরিচয়সূচক নয়, আমার পক্ষে তাতে তার চেয়ে অনেকবেশি পদার্থ আছে। তার পরে তাঁর শাড়ী, তাঁর বালা, তাঁর কপালের মাঝখানের কুংকুমের বিন্দু, কেবলমাত্র দৃশ্যগত নয়; তার পিছনে অনেকখানি অদৃশ্য সামগ্রী আছে এক নিমেষেই সেই সমস্ত এসে চোখ এবং মনকে ভ’রে ফেলে। ভালো ক’রে ভেবে দেখো এই সমস্ত চিহ্ন, বচনীয় এবং অনির্বচনীয় কত বিচিত্র পদার্থকে সংক্ষেপে একই কালে বহন করে; তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে গেলে আঠারো পর্ব্ব বই ভরতি হয়ে যায়। এ জাহাজে অনেক মেয়ে আছে তাদের মধ্যে এই বাঙালি মেয়েকে দেখে মন এত খুসি হেলো—আর কিছু নয় জান্‌তেই মনের আনন—মন যখন বলে জান্‌লুম তখন সে খুসি হয়—আমরা যাকে বলি মন-কেমন-করা তার মানে হচ্চে চারদিকের জানা পদার্থটা যথেষ্ট পূর্ণায়তন নয়।


৯ই চৈত্র, ১৩৩৫

কাল জাপানী বন্দরে এসেছি-নাম মোজি। আগামী কাল পৌঁছব কোবে। পাখী বাসা বাঁধে খড়কুটো দিয়ে, সে বাসা ফেলে যেতে তাদের দেরি হয় না—আমরা বাসা বাঁধি প্রধানত মনের জিনিষ দিয়ে—কাজেকর্ম্মে, লেখাপড়ায়, ভাবনাচিন্তায় চারিদিকে একটা অদৃশ্য আশ্রয় তৈরী হতে থাকে। হাওয়া-গাড়ির গদি যেমন শরীরের মাপে টোল খেয়ে খোঁদলগুলি গড়ে তোলে, মন তেমনি নড়তে চড়তে তার হাওয়া-

১১