পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᏬé বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা সমস্ত জগৎ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রাণিসমূহে পরিবৃত। অবশুই কোনও উদেশ্ব সিদ্ধ করিবার নিমিত্ত, সমস্ত প্রাণী সৃষ্ট হইয়াছে। কিন্তু সেই উদেশ্ব কি, অনেক স্থলে, তাহার নির্ণয় করিতে পারা যায় না। জগতে কত জীব আছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। কিন্তু, স্মৃষ্টিকৰ্ত্তার কি অপার মহিমা ! তিনি সমস্ত জীবের প্রতিদিনের পর্য্যাপ্ত আহারের যোজনা করিয়া রাখিয়াছেন। অধিকাংশ জন্তু লতা, পাতা, ফল, মূল, ঘাস খাইয় প্রাণধারণ করে। কতকগুলি জন্তু, আপন অপেক্ষ ক্ষুদ্র ও দুর্বল জন্তুর প্রাণবধ করিয়া, তাহাদের মাংস খায়। উহাদিগকে শ্বাপদ অর্থাৎ শিকারি জন্তু বলে । অশ্ব, গো, গর্দভ, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি কতকগুলি জন্তু লোকালয়ে থাকে, এবং মানুষে যাহা দেয়, তাহাই খাইয়া প্রাণধারণ করে। এই সকল জন্তুকে গ্রাম্য পশু বলে । গ্রাম্য পশুরা অতি শাস্তস্বভাব, মনুষ্যের অনেক উপকারে আইসে। কোন জন্তু কোন শ্রেণীতে নিবিষ্ট, কাহার কি নাম, বিশেষ রূপে জানা অতি আবশ্যক। কোনও জন্তুকেই অযথা নামে ডাকা উচিত নহে ; যাহার যে নাম, তাহাকে সেই নামে ডাকা কৰ্ত্তব্য। কোনও কোনও ব্যক্তি ফড়িঙকে পশু বলে ; কিন্তু ফড়িঙ পশু নয়, পতঙ্গ। যে সকল জন্তুর চারি পা, তাহাদিগকে চতুষ্পদ বলে। পক্ষী চতুষ্পদ নহে, কারণ উহার দুটি বই পা নাই ; এজন্য, উহাকে, চতুষ্পদ না বলিয়া, দ্বিপদ বলা উচিত। ঈশ্বর, কি অভিপ্রায়ে, কোন জন্তুর সৃষ্টি করিয়াছেন, আমরা তাহ অবগত নহি ; এজন্য, কতকগুলিকে পূজ্য ও পবিত্র জ্ঞান করি, আর কতকগুলিকে ঘৃণা করি। কিন্তু ইহ। অন্যায় ও ভ্রান্তিমূলক। বিশ্বকৰ্ত্ত ঈশ্বরের সন্নিধানে, সকল জন্তুষ্ট সমান। অতএব, আমাদেরও ঐরূপ জ্ঞান করা উচিত। * পশুদের মধ্যে পদমৰ্য্যাদা নাই। লোকে সিংহকে মৃগেন্দ্র অর্থাৎ পশুর রাজা বলে। কিন্তু, উহা কদাচ ঈশ্বরের অভিপ্রেত নহে। সকল পশু অপেক্ষা সিংহের সাহস ও বিক্রম অধিক ; এই নিমিত্ত, মনুষেরা উহাকে ঐ উপাধি দিয়াছে ; নচেৎ, সিংহ, অন্য অন্য পশু অপেক্ষ, কোনও মতে উৎকৃষ্ট নহে।