পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালার ইতিহাস—দ্বিতীয় ভাগ \צס সিতাব রায় এমন অসাধারণ সাহসিকতা প্রদর্শন করেন যে, তদর্শনে ইঙ্গরেজেরা, তাহার ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছিলেন। পরাজয়ের পর, পূর্ণিয়ার গবর্ণর, সম্রাটের সহিত মিলিত হইবার নিমিত্ত, প্রস্থান করিলেন। কর্ণেল কালিয়ড ও মীরন, উভয়ে একত্র হইয়া, র্তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। বর্ষার আরম্ভ হইল ; তথাপি র্তাহারা তাহার অনুসরণে বিরত হইলেন না । ১৭৬০ খৃঃ অব্দের ২রা জুলাই রজনীতে অতিশয় দুৰ্য্যোগ হইল । মীরন, আপন পটমগুপে উপবিষ্ট হইয়া, গল্প শুনিতেছিলেন ; দৈবাৎ, ঐ সময়ে, অশনিপাত দ্বারা, তাহার ও র্তাহার দুই জন পরিচারকের পঞ্চতপ্রাপ্তি হইল। কর্ণেল কালিয়ড, এই দুর্ঘটনা প্রযুক্ত, কাদিম হোসেনের অনুসরণে বিরত হইলেন, এবং পাটনা প্রত্যাগমন পূর্বক, বর্ষার অনুরোধে তথায় শিবির সন্নিবেশিত করিলেন । মীরন নিতান্ত দুরাচার, কিন্তু নিজ পিতার রাজত্বের প্রধান অবলম্বন স্বরূপ ছিলেন । তৎকালের মুসলমান ইতিহাসলেখক কহেন, নিৰ্ব্বোধ ইন্দ্রিয়পরায়ণ বৃদ্ধ নবাবের যে কিছু বুদ্ধি ও বিবেচনা ছিল, এক্ষণে তাহ। এক বারে লোপ পাইল । অতঃপর রাজকাৰ্য্যে অত্যন্ত গোলযোগ ঘটিতে লাগিল। সেনাগণ, পূৰ্ব্বতন বেতন নিমিত্ত, রাজভবন অবরোধ করিয়া, বিসংবাদে উদ্যত হইল। তখন, নবাবের জামাতা, মীর কাসিম, তাহাদের পুরোবত্তী হইয়া কহিলেন, আমি অঙ্গীকার করিতেছি, স্বধন দ্বারা তোমাদিগকে সন্তুষ্ট করিব । এই বলিয়া, তিনি তাহাদিগকে আপাততঃ ক্ষান্ত করিলেন । নবাব মীর কাসিমকে, দৌত্যকার্য্যে নিযুক্ত করিয়া, কলিকাতায় পাঠাইলেন । তথায়, বান্সিটার্ট ও হেষ্টিংস সাহেবের নিকটে, তাহার বুদ্ধি ও ক্ষমতা বিশেষ রূপে প্রকাশ পায়। তৎকালে, এই দুই সাহেবের মত অনুসারেই, কোম্পানির এতদেশীয় সমুদয় বিষয়কৰ্ম্ম নিষ্পন্ন হইত। দ্বিতীয় বার দূত প্রেরণ আবশ্বক হওয়াতে, মীর কাসিম পুনৰ্ব্বার প্রেরিত হয়েন । এই রূপে, দুই বার, মীর কাসিমের বুদ্ধি ও ক্ষমতা দেখিয়া, গবর্ণর সাহেবের অন্তঃকরণে এই দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে যে, কেবল এই ব্যক্তি অধুনা বাঙ্গালার রাজকাৰ্য্যনিববাহে সমর্থ। তদনুসারে, তিনি মীর কাসিমকে তিন প্রদেশের ডেপুটি নাজিমী পদ প্রদানের প্রস্তাব করিলেন । মীর কাসিম সম্মত হইলেন। অনন্তর, বান্সিটার্ট ও হেষ্টিংস, উভয়ে, এক দল সৈন্য সহিত মুরশিদাবাদ গমন করিয়া, মীর জাফরের নিকট ঐ প্রস্তাব করিলে, তিনি তদ্বিষয়ে অত্যন্ত অনিচ্ছাপ্রদর্শন করিলেন। তিনি বুঝিতে পারিলেন, এরূপ হইলে, সমুদয় ক্ষমতা অবিলম্বে জামাতার হস্তে যাইবেক, আমি আপন সভামণ্ডপে পুত্তলিকা প্রায় হইব।