পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ঐ পদে গর্ডন্ ইয়ঙ্‌ সাহেবকে নিযুক্ত করেন। তৎকালে বিদ্যাসাগর মহাশয়, হেলিডে সাহেবকে বলেন যে, “আপনি অল্পবয়স্ক সিবিলিয়ান্‌ বালককে এতবড় গুরুতর ভার দিয়া ভাল করেন নাই; তিনি এ প্রদেশের রীতি-নীতি আচারব্যবহার কিছুমাত্র পরিজ্ঞাত নন; যেহেতু ঐ সাহেব সিবিলিয়ান্‌, অহঙ্কৃত ও বালক, বিশেষতঃ উনি অল্পদিন হইল ভারতবর্ষে সমাগত হইয়াছেন; এ প্রদেশের রীতি-নীতি কিছুই পরিজ্ঞাত নহেন, শিখিতে আরও কিছুকাল লাগিবে। ইনি কিরূপে এই গুরুতর ভার বহন করিবেন, বুঝিতে পারি না। ডাক্তার ময়েট্‌, বহুকাল হইতে শিক্ষাসমাজের কর্ম্মধ্যক্ষ ছিলেন, তাঁহার প্রতি এ ভার সমর্পণ করিলে, সর্ব্বোতোভাবে ভাল হইত।” ইহা শ্রবণ করিয়া, হেলিডে সাহেব বলিলেন, “আমার নিজের এ বিষয় পরিদর্শনে বিলক্ষণ ইচ্ছা আছে। আমি নিজেই সকল কাজ দেখিব, ইয়ঙ্‌ সাহেব উপলক্ষমাত্র; তুমি দুই মাস ইয়ঙ্‌ সাহেবকে কার্য্যশিক্ষা দাও। ইয়ং বুদ্ধিমান্, ত্বরায় কার্য্য়দক্ষ হইবার সম্ভাবনা।” হেলিডের আদেশে, বিদ্যাসাগর মহাশয় কয়েক মাস, মধ্যে মধ্যে ডিরেক্টার আফিসে যাইয়া, ঐ সাহেবকে উপদেশ প্রদান করিয়া কার্য্য়ক্ষম করিয়া দেন। যে কয়েক মাস ইয়ঙ্‌ সাহেব কার্য্য শিক্ষা করেন, সেই কয়েক মাস অগ্রজকে বিশেষ সম্মান করিতেন।

 অগ্রজ মহাশয়, জন্মভূমি বীরসিংহ ও তৎসন্নিহিত গ্রামবাসী লোগণের ও বালকবৃন্দের মোহান্ধকার নিবারণমানসে বিদ্যালয় স্থাপন করিবেন, শৈশবকাল হইতে এ বিষয় মনে মনে আন্দোলন করিতেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবপ্রযুক্ত, বিদ্যালয় স্থাপন করিব এই কথা, এতাবৎকাল পর্যন্ত ব্যক্ত করিতে পারেন নাই। এক্ষণে মাসিক ৩০০৲ তিন শত টাকা বেতন পাইতেন ও বেতালপঞ্চবিংশতি, জীবনচরিত, বাঙ্গালার ইতিহাস, উপক্রমণিকা, বোধোদয় প্রভৃতি পুস্তক বিক্রয়ের লাভও যথেষ্ট হইত; একারণ, ভ্রাতৃচতুষ্টয়সহ ফাল্গুনমাসে জলপথে উলুবেড়ে, গেঁয়োখালি, তমোলুক, কোলা, বাক্‌সী, গোপীগঞ্জ হইয়া তৃতীয় দিবসে ঘাঁটালে নৌকা হইতে অবতরণ করিয়া বাটী যান, এবং বাটীতে