পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত

শুনিলেন যে, ঠাকুরদাসের সমস্ত দিবসের মধ্যে পাকাদি কার্য্য হয় নাই, ইহাতে অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন এবং বলিলেন, “তোমার যাহা শিক্ষা হইয়াছে তাহাতে কার্যক্ষম হইয়াছ, অতঃপর আর তোমার এরূপ ক্লেশ-স্বীকারের প্রয়োজন নাই। অদ্য এক্ষণে আহারাদি সমাধা কর, কল্য প্রাতেই তোমার সম্বন্ধে যাহা কিছু বক্তব্য থাকে, তাহা বাচস্পতি মহাশয়কে বলিব।” পরদিন প্রাতে বাচস্পতি মহাশয়ের বাটী যাইয়া তাঁহাকে বলিলেন যে, “আপনার জ্ঞাতি ঠাকুরদাস কর্ম্মক্ষম হইয়াছেন, বাঙ্গালায় ও ইংরাজীতে হিসাব করিবার ভালরূপ ক্ষমতা হইয়াছে; আপনি কাহাকেও বলিয়া ইহাকে কর্ম্মে নিযুক্ত করিয়া দিন। ইহার চরিত্রও উত্তম।” বাড়িসাগ্রামে বাচস্পতির এক সন্ত্রান্ত কুটুম্ব ছিলেন। তিনি এক নাবালক পুত্র ও স্ত্রী রাখিয়া পরলোকগমন করেন। অন্য কেহ অভিভাবক না থাকায়, একজন কার্য্যদক্ষ বিশ্বাসী লোক রাখা আবশ্যক হইয়াছিল।

 বাচস্পতি মহাশয়, ঠাকুরদাসকে বলিলেন, “তোমাকে অন্ততঃ এক বৎসরের জন্য তথায় অবস্থিতি করিয়া বিষয় রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে।” ঠাকুরদাস অগত্যা স্বীকার পাইয়া বড়িসায় কিছু দিন থাকিয়া, নাবালকের বিশিষ্টরূপ আদায় ও বন্দোবস্ত করিলেন। তজ্জন্য বাচস্পতি, ঠাকুরদাসের সাংসারিক ব্যয়-নির্ব্ব‌াহার্থে রীতিমত টাকা পাঠাইয়া দিতে কাতর হন নাই। ঠাকুরদাসের জননী মাসে মাসে কিছু পাইতে লাগিলেন; তাহাতে কষ্টের অনেক লাঘব হইয়াছিল। এক বৎসর কাল বড়িসায় অবস্থিতি করিয়া, বাচস্পতি মহাশয়কে বলেন যে, “মহাশয়, অনেক কষ্টে ইংরাজী শিক্ষা করিয়াছি। আপনি আমাকে ইংরাজীর হিসাবের কার্য্য নির্ব্ব‌াহ করিবার জন্য কাহাকেও অনুরোধ করিয়া নিযুক্ত করিয়া দিন।” বাচস্পতি মহাশয়, ঠাকুরদাসের কর্ম্মের শৃঙ্খলা ও সৌজন্য দর্শনে সন্তুষ্ট ছিলেন, একারণ বড়বাজার দোয়েহাটা-নিবাসী পরম দয়ালু ভাগবতসিংহের বাটীতে কার্য্যে নিযুক্ত করিয়া দিলেন। ভাগবতবাবু পরম ধার্ম্মিক ও দয়ালু ছিলেন; তাঁহার আফিসে ঠাকুরদাসকে দুই টাকা বেতনে