পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
উপক্রমণিকা।
১১

নিযুক্ত করিলেন, এবং বাটীতে বাসা দিয়া খোরাক পোষাক দিতেন। ঠাকুরদাস ঐ ২৲ দুই টাকা জননীর সাংসারিক ক্লেশ নিবারণের জন্য বাটীতে পাঠাইয়া দিতেন। এইরূপ মাসে মাসে দুই টাকা পাইয়া দুৰ্গাদেবীর সাংসারিক ব্যয়নির্ব্বা‌হের সুবিধা হইল। ভাগবতবাবু, ঠাকুরদাসের কার্য্যদক্ষতা অবলোকন করিয়া, ক্রমশঃ রীতিমত বেতন বৃদ্ধি করিয়া দিতে লাগিলেন। ইহার কিছু দিন পরে ভাগবতবাবু বলেন, “ঠাকুরদাস, তোমার কনিষ্ঠ ভ্রাত কালিদাসকে আনাইয়া কাছে রাখিয়া ইংরাজী শিক্ষা দিলে, তাহাকেও আফিসে নিযুক্ত করা তইবে। দুই সহোদরে কর্ম্ম করিলে সংসারের কষ্ট নিবারণ হইবে।” একারণ, কালিদাসকে আনাইয়া ভাগবতবাবু বাটীতে রাখিলেন। ইহার কিছুদিন পরে ভাগবতসিংহ কালগ্রাসে নিপতিত হইলে, তাহার পুত্র জগদ্দুর্লভ সিংহ ও তৎপরিবারবর্গ ঠাকুরদাসকে পূর্ব্বাপেক্ষা ভাল বাসিতে লাগিলেন। কনিষ্ঠ ভ্রাতা কর্ম্মে পারগ হইলে, কিছুদিন ঠাকুরদাস কাশীজোড়া ও মণ্ডলঘাটে অবস্থিতি করিয়া, রেশমের ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হন; তৎপরে দেশে অবস্থিতি করিয়া কাঁসার বাসনের ব্যবসা করেন। এইরূপ নানা প্রকার ব্যবসা দ্বারা সাংসারিক কষ্ট নিবারণ ও কিছু সঞ্চয় করিলেন। এদিকে কলিকাতায় তাহার ভ্রাতা তাহার কর্ম্মে থাকিয়া নানা প্রকার বিশৃঙ্খলা ঘটান; এজন্য জগদ্দুর্লভ সিংহ বলেন, তোমার ভ্রাতার দ্বারা আমার কার্য্যের বিস্তর ক্ষতি হইতেছে; অতএব তুমি নিজে আসিয়া কার্য্য কর। বিশেষতঃ পিতা মৃত্যুকালে তোমাকে বিশ্বাস করিয়া আমার বাটীর ও আফিসের সকল ভার দিয়াছেন। একারণ, ঠাকুরদাস ব্যবসা পরিত্যাগ করিয়া, পুনর্ব্বা‌র সিংহমহাশয়ের বাটীতে বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। ১৭৩৫ শকে খানাকুল কৃষ্ণনগরের পশ্চিম পাতুলগ্রামনিবাসী পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশের দৌহিত্রী ও রামকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দুহিতা ভগবতী দেবীর সহিত ঠাকুরদাসের পাণিগ্রহণ-বিধি সমাধা হইল।

 রামকান্ত চট্টোপাধ্যায় জাহানাবাদ মহকুমার পশ্চিম গোঘাট গ্রামে বাস করিতেন। ইনি সংস্কৃত-ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। বাটীতেই তাঁহার